Check PAGE RANK of Website pages Instantly

Check Page Rank of your Web site pages instantly:

This page rank checking tool is powered by PRChecker.info service

Monday, August 28, 2017

লামা উপজেলা পরিক্রমা: ধারাবাহিক প্রতিবেদন-০৪



কার্টেসিঃ মোহাম্মদ কামারুজ্জামান, সাংবাদিক, লামা, বান্দরবান পার্বত্য জেলা।

মাতামুহুরীর ভাঙ্গন রোধে নদীর গতিপরিবর্তন জরুরী
*********************
*************
মাতামুহুরী নদীর অব্যাহত ভাঙ্গনে লামা পৌর এলাকা, চকরিয়াস্থ বমুবিলছড়ি ইউনিয়নের একাংশসহ কয়েকটি স্থান নদী গর্ভে বিলীন হয়েগেছে। ৫০কোটি টাকার স্থাপনা ভাঙ্গনের মুখে। ভাঙ্গনের সাথে পাল্লা দিয়ে প্রতি বছর পাহাড়ী ঢলে সৃষ্ট বন্যায় লামা পৌর এলাকা ও পার্শ্ববর্তী বমুবিলছড়ি ইউনিয়নের নিম্মাঞ্চল প্ল¬াবিত হয়ে কৃষি ফসলসহ সম্পদের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। নদী ভাঙ্গন ও বন্যার কবল থেকে রক্ষাকল্পে প্রয়োজন নদীর গতি পরিবর্তন। সমস্যা নিরসনে লামা-চকরিয়ার রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দসহ বিশেষজ্ঞ দল পরিদর্শন করেন প্রস্তাবিত এলাকা।
মায়ানমার সীমান্তাদ্রি থেকে মূলত: মাতামুহুরীর উৎপত্তি। অসংখ্য পাহাড়ের কোলঁেঘষে আলীকদম ও লামার বুক ছিড়ে চকরিয়া হয়ে মহনায় পতিত হয় এ নদী। এ অঞ্চলে জনবসতি তথা সভ্যতার সূচনালগ্ন থেকে পাহাড়ের ঝর্ণাধারায় এ নদীর মিঠাপানি দু’কুলের অধিবাসিদের জন্য ছিল মাতৃ আশির্বাদ। মাতামুহুরী নদী নাম করণের পেছনে রয়েছে মূলত: নদী তীরবর্তী বাসিন্দাদের মাতৃ
স্নেহে আগলে রাখার ইতিহাস। এখনো অনেকে এ নদীতে মোম জা¦লিয়ে মানত করে, নানা আঙ্গিকে পূজা দিয়ে অকল্যাণ থেকে রক্ষার প্রার্থণা করেন। মানুষ নদীর উপকারিতা ভুলে, পরিবেশ দূষন করায় নাব্যতা হারিয়ে ক্ষিপ্ত নদী বর্ষাকালে দু’তীরের অধিবাসিদেরকে তলিয়ে দেয়াসহ গ্রাস করে নিচ্ছে ভুসম্পদ ও স্থাপনা সমুহ।
লামা পৌরসভা ও চকরিয়া উপজেলাধীন বমুবিলছড়ি ইউনিয়নের একাংশের তিন দিকে ঘীরে একেঁেবকে নদীটি দুখিয়া-সুখিয়া পাহাড় ভেদ করে উত্তর দিকে বাঁক নিয়ে পশ্চিম মূখি প্রবাহিত হয়। বমুবিলছড়ি ইউনিয়নের মাইজপাড়ার পূর্বপ্রান্ত থেকে সোজা পশ্চিমপাড়া ও লামা পৌরসভার ১ নং ওয়ার্ড টিটি এন্ড ডিসি সাপমারা ঝিরি পাহাড়ের কোল ঘেঁষে বমু সংযোগ খালে চলে আসে। সেখান থেকে ১৮০ ডিগ্রি বাঁক নিয়ে বিলছড়ি পশ্চিমপাড়া-চাম্পাতলীকে বিভক্ত করে ও লামা পৌরশহরের পশ্চিমপাশ ঘেঁষে সোজা আরো প্রায় দেড় কিলো মিটার দক্ষিনে আসে। সেখান থেকে একই এঙ্গেলে দুখিয়া-সুখিয়া পাহাড় ভেদ করে পশ্চিম-উত্তর মূখে ইংরেজি “ভি” আকৃতিতে বাঁক নিয়ে সাপমারা ঝিরি পাহাড়ের পূর্বদিকের কোল ঘেঁষে পশ্চিম মূখে পতিত হয়।
বমু সংযোগ খাল ঘেঁষে সাপমারাঝিরি পাহাড়টি মাতামুহুরী নদীকে দু’ঢালুতে রেখে অবস্থ্ান করছে। বমুখাল ও মাতামুহুরীর সংযোগস্থল-এর কিছু দক্ষিনে টিটি এন্ড ডিসি’র পাশ দিয়ে সাপমারাঝিরি চার’শ মিটার খনন করে নদীর গতিপথ সোজা করে দেয়া সম্ভব। এভাবে নদীর গতি পরিবর্তন করা হলে অব্যাহত ভাঙ্গন ও বর্ষা মৌসুমে জলাবদ্ধতা থেকে রক্ষা পাবে লামা পৌর শহরসহ পাশ্ববর্তী বমুবিলছড়ি ইউনিয়নের একাংশ। ফলে স্থানীয়রা প্রায়ই বছর কোটি কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি থেকে রক্ষা পাবে। সে সাথে বন্যা ও নদী ভাঙ্গনরোধে স্থায়ী ব্যবস্থা নিশ্চিত হবে।

অপর দিকে টিটি এন্ড ডিসি থেকে দক্ষিণ ও পশ্চিম উত্তর দিকের প্রায় তিন কিলোমিটার মাতামুহুরী নদীর অংশ বিশেষ হয়ে উঠবে এক বিশাল কৃত্রিম লেক (জলাশয়)। সম্ভাব্য লেকে মৎস্য চাষাবাদ করে আর্থিক লাভবান হওয়ার পাশাপাশি একেবারে শহর ঘেঁসে পর্যটক শিল্পের নতুন দ্বারোম্মচিত হবে।
প্রতি বছর বর্ষা মৌসমে খরস্রোতা মাতামুহুরীর করাল গ্রাসে দু’কুল ভাঙ্গনের পাশাপাশি পাহাড়ী ঢলে নিমজ্জিত করে দেয় লামা শহরসহ বিস্তীর্ণ এলাকা। ক্ষয় ক্ষতির পরিমান দাড়ায় কোটি টাকারও বেশী। গত ত্রিশ বছরে অসংখ্য বাড়ী ঘর, সরকারি বেসরকারি স্থাপনা রাস্তাঘাট, ব্রীজ, কালভাটর্, স্কুল, মাদ্রাসা, মসজিদ, ক্যায়াং ও লামা পৌর এলাকার ব্যাপক এলাকাসহ পার্শ্ববর্তী চকরিয়াধীন বমুবিলছড়ির বিস্তৃীর্ণ এলাকা বিলীন হয়ে যায় নদীগর্ভে। প্রায় অর্ধ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এলজিইডি’র একটি ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। হাল নাগাদ বিভিন্ন পয়েন্টে সদ্য নির্মিত কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে গার্ডার ব্রীজসহ বহু গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ভাঙ্গনের কবলে রয়েছে।
অপর দিকে গত তিন দশকে তামাক চাষ, বৃক্ষ নিঁধন, পাহাড় কাটা, পাথর আহরণসহ পরিবেশ বিদ্ধেষী কর্মকান্ডের ফলে নদীর নাব্যতা অস্বাবাভিক ভাবে হ্রাস পেয়েছে। ফলে কয়েক ঘন্টা টানা মূসলধারে বৃষ্টি হলে পৌর এলাকাসহ বমুবিলছড়ি ইউনিয়নের একাংশসহ, উপজেলা প্রশাসন ও বাণিজ্যিক এলাকা ৫/১০ ফুট পানির নীচে তলিয়ে যায়। এসময় প্রায় ৩০ হাজার মানুষ পানি বন্দি হয়ে পড়ার পাশা-পাশি ২ হাজার একর ক্ষেতের ফসল জলমগ্নতার কারণে পলিচাপা পড়ে নষ্ট হয়ে যায়।
লামাকে নদী ভাঙ্গনের কবল থেকে রক্ষা ও বন্যামুক্ত করার স্থায়ী ব্যবস্থা ও গতি পরিবর্তনের দাবীতে সম্প্রতি লামাবাসী প্রধানমন্ত্রীর নিকট স্মারকলীপি দিয়ে আবেদন জানান। এ দাবীর প্রেক্ষিতে ২ আগষ্ট নদী ভাঙ্গন ও বন্যাকবল থেকে রক্ষায় মাতামুহুরী নদীর গতিপরিবর্তনের সাম্ভ্যবতা যাচাই-সরেজমিন পরিদর্শন করেছেন বিষেশজ্ঞ দল। ওইদিন নদীভাঙ্গন ও গতিপথ পরিবর্তন প্রস্তাবিত এলাকা নদীপথে ঘুরে দেখেন কক্সবাজার ১ আসনের সাংসদ হাজি মো: ইলিয়াছ। এ সময় লামা পৌর মেয়র মো: জহিরুল ইসলাম, চকরিয়া পৌর মেয়র আলমগীর চৌধুরী, সরুজপুর-মানিকপুর চেয়ারম্যান আওয়ামীলীগ নেতা আজিমুল ইসলাম, বমুবিলছড়ি ইউপি চেয়ারম্যান আ: মোতালেব, পানি উন্নয়ন বোর্ডের কক্সবাজার ও বান্দরবানের দায়িত্বরত প্রকৌশলীগণ, লামা নাগরিক ফোরামের নেতৃবৃন্দসহ স্থানীয় সাংবাদিকরা ছিলেন।
লামা, বমুবিলছড়ি, মানিকপুর-সরুজপুরসহ চকরিয়ার একটি বিশাল এলাকাকে নদী ভাঙ্গন ও বন্যামুক্ত করার স্থায়ী ব্যবস্থা গ্রহনে বর্তমান সরকার দীর্ঘমেয়াদি একটি প্রকল্প’র অর্থ বরাদ্দ দিচ্ছেন। ভাঙ্গণ কবলিত এলাকা পরিদর্শনকালে চকরিয়া-পেকুয়ার সাংসদ হাজি মো: ইলিয়াছ ও তার সফরসঙ্গী নেতৃবৃন্দ সূত্রে এই তথ্য পাওয়াগেছে। সূত্রে জানাগেছে, মাতামুহুরীর নাব্যতা পূনরুদ্ধার, ভাঙ্গণরোধ, বন্যা নিয়ন্ত্রণবাঁধ ও নদীর গতিপথ পরিবর্তন করে সরকার এই অঞ্চলের মানুষের দীর্ঘ দুর্ভোগ লাগবে কাজ করছেন।
চলবে...
***********************************************************************