Check PAGE RANK of Website pages Instantly

Check Page Rank of your Web site pages instantly:

This page rank checking tool is powered by PRChecker.info service

Thursday, August 24, 2017

লামা উপজেলা পরিক্রমা: ধারাবাহিক প্রতিবেদন-০২



কার্টেসিঃ মোহাম্মদ কামারুজ্জামান, সাংবাদিক, ছবি: আমির আজিজ, লামা, বান্দরবান পার্বত্য জেলা।

লামা উপজেলার ইতিহাস ঐতিহ্য ও অবস্থানঃ 
******************************
২০০১ সালে পরিসংখান অনুসারে দেখা যায়, লামা উপজেলার আয়তন ৬৭১.৮৪ বর্গকিলোমিটার। ভৌগলিক অবস্থানগত দিক দিয়ে উত্তরে- বান্দরবান সদর উপজেলা, দক্ষিণে-নাইক্ষ্যংছড়ি, পূর্বে- রুমা, থানছি, আলীকদম উপজেলা এবং পশ্চিমে-চকরিয়া উপজেলা। পার্বত্য এ উপজেলার প্রশাসনিক ও শহর এলাকাটি ছোট ছোট পাহাড় বেষ্ঠিত সমতল ভূমিতে অবস্থিত। একবারেই কাছের পাহাড় সমুহ দু:খিয়া- সুখিয়াকে বেদ করে বয়ে যাওয়া খরস্রোতা মাতামুহুরীর তীর ঘেষে পূর্ব দিকে উত্তর-দক্ষিণমূখী লম্বমান। একটি মাত্র নদী; উপজেলার বুক চিরে বয়ে যাওয়া মাতামুহুরী নদীর উৎসস্থল; আরকান সীমান্ত অদ্রিমালার কোল ঘেসে। এ নদী এঁকেবেঁকে পশ্চিমমূখী বাঁক নিয়ে বঙ্গোপসাগরে পতিত হয়েছে। এই উপজেলার ভূমি ঢাল পশ্চিম মূখী। 

মাতামুহুরী নদী বিধৌত, দু;খিয়া-সুখিয়া পাহাড় পাদদেশে ছোট্ট লামা শহরটি নদী তীরে অবস্থিত। কতিথ আছে লামা নামে এক সুন্দরী আরাকান রাজ কন্যা এলাকায় জনহীতকর অনেক কর্মকান্ড করেছিলেন। ওই সময় “লামা সুন্দরী”র নামানুসারে এই স্থানের নাম করণ “লামা” হয় বলে জনশ্রুতি রয়েছে। সাংবাদিক এম. রুহুল আমিন সম্পাদিত প্রেক্ষাপট; “পার্বত্য চট্টগ্রাম অরন্য রানী লামা” সূত্রে প্রকাশ, ১৭শ শতাব্দীর শেষ দিকে আরাকান থেকে হ্লামা নামক এক সুন্দরী রমনী বিপুল ধন সম্পদ ও স্বর্ণালংকার নিয়ে আরকান রাজ্য থেকে কক্সবাজার, হারবাং ও মানিকপুর হয়ে লামায় আগমন করেছিলেন। তিনি সাবেক বিলছড়ি গ্রামে বসবাস করেন। ওই সময় তিনি একটি বৌদ্ধ বিহার নির্মাণ করে “মহামনি বৌদ্ধ বিহার”। তাঁর আতিথিয়তায় মুগ্ধ করে তোলেন গ্রামবাসীদেরকে। অত্র অঞ্চলের উপজাতীয় জনগোষ্ঠি তার সুনাম, খ্যতি এবং আতিথিয়তায় মুগ্ধ হয়ে অত্র স্থানটি “হ্লা-মা” নাম করণ করেন। উপজাতিয় ‘হ্লা-মা’ শব্দের অর্থ সুন্দরী নারী। আধুনিক সভ্যতার প্রেক্ষাপট হ্লামা থেকে ‘লামা‘ নামকরণ হয়।

জনবসতি স্থাপন :
************
প্রাচীনকালে মাতামুহুরী নদীর মিঠাপানির উৎসকে কেন্দ্র করে নদী উপত্যকায় বসতি স্থাপন শুরু হয়। বহুকাল আগে কক্সবাজারের চকরিয়া, চট্টগ্রামের সাতকানিয়া ও লোহাগাড়া উপজেলা থেকে বাঙ্গালীরা প্রথমে নদী পথে বিভিন্ন ধরণের ব্যবসা করতে এসে এখানে স্থায়ী হয়। ক্রমশ জনবসতি বৃদ্ধি পেলে ঊনিশ শতকের শুরুর দিকে গজালিয়া, লামা ও আলীকদম নিয়ে থানা প্রতিষ্ঠা হলে এতদাঞ্চল প্রশাসনিক প্রক্রিয়ায়ার আওতায় আসে। জাতীগত দাঙ্গার কারণে ষাটের দশকে ভারত থেকে কিছু বাঙ্গালাভাষি মুসলমান পরিবার তৎ’কালীন সরকার কর্তৃক পূর্নবাসিত হয়ে প্রথমে নোয়াখালী-কুমিল্লা-রামগড় পরে লামা উপজেলার ফাঁসিয়াখালীসহ বিভিন্ন গ্রামে বসতি স্থাপন করেন। একই সময় কাপ্তাই বাঁধ (জল বিদ্যুৎ)এর কারণে আরো কিছু পরিবার পুণর্বাসিত হন এই উপজেলায়।
দেশ স্বাধীনের পর ৭০’র দশকের দিকে চট্টগ্রাম, নোয়াখালী কুমিল্লাসহ বিভিন্ন জেলার কিছু লোক এখানে বনজ দ্রব্য আহরণ করতে এসে আয়বর্ধক অনুকুল পরিবেশ হেতু স্থায়ীভাবে বসতি শুরু করেন। অপর দিকে ১৯৭৯-৮০ সালের দিকে প্রয়াত রাষ্টপতি জেনারেল জিয়াউর রহমানের শাসনামলে দেশের বিভিন্ন জেলার ভূমিহীন পরিবারদের পাঁচ একর করে পাহাড়ী ভূমি বন্দোবস্তি দিয়ে পর্যায়ক্রমে পুনর্বাসিত করা হয়। এই পক্রিয়া এরশাদ আমলে ১৯৮৬ সাল নাগাদ চলে। একই সময় আরও কিছু পরিবার নিজ উদ্যোগে তাদের আতœীয় স্বজনের সহযোগিতায় এখানে বসতি স্থাপন করেন এবং সাধারণত; কিছু পরিবার পাঁচ একর করে খাস ভূমি বন্দোবস্ত লাভ করেন। সে থেকে ক্রমেই জনসংখ্যা বৃদ্ধি পেতে থাকে।


থানা-মহকুমা-উপজেলার গোড়াপত্তন :
*************************
১৯২০ সালের ৭ সেপ্টেম্বর লামা থানা, ১৯৭০ সালে পর্যায় ক্রমে মহকুমায় উন্নীত হয়। ১৯৮১ সালের ১৮ই এপ্রিল বান্দরবান মহকুমা ও লামা মহকুমার সমন্বয়ে বান্দরবান পার্বত্য জেলা গঠিত হয়। ১৯৮২ সালে দেশের ৪৭টি লামা মহকুমাকে পূর্নাঙ্গ জেলা ঘোষণা করা হলে, পার্বত্য লামাও জেলা ঘোষিত হয়ে চারদিন পর স্থগিত হয়ে যায়। সার্বিক বিবেচনায় বর্তমানে লামা জেলা হওয়ার পূর্নদাবী রাখে। স্বাধীনতা পূর্ববর্তীকালে প্রশাসনিক কর্মকর্তা ছিলেন সার্কেল (সিওডেভ) উন্নয়ন। প্রশানকি এলাকাছিল মাতামুহূরী নদীতীর ঘেসে পরিশ্চম পাশে গজালিয়াস্থ চাম্পাতলী ও টিটিএন্ডডিসি এলাকায়। স্বাধীনতা পরবর্তীকালে এই উপজেলার প্রশাসনিক পরিচয় থানা হিসেবে ছিল। থানা প্রশাসন মহকুমা হলে; ১৯৮০ সালে লামা মহকুমা প্রশাসক (সাবডিভিশন) অফিসার (এসডিও) ছিলেন, জনাব জুলফিকার আলী হায়দার। এ.এস.ডি.ও ছিলেন, জনাব দেলোয়ার হোসেন; তিনি ২য় কোর্টের (ম্যাজিষ্ট্রেট) বিচারক ছিলেন। একই সময় নিম্ম আদালতের; ৩য় শ্রেণির (ম্যাজিষ্ট্রেট) বিচারক ছিলেন। ১৯৮২ সালে মহকুমা প্রশাসক ছিলেন, জনাব জালাল আহম্মেদ। সহকারি মহকুমা অফিসার ছিলেন, জনাব মোহাম্মদ আবু মুসা (এ.এস.ডি.ও), একই সময় ৩য় শ্রেণির ম্যাজিষ্ট্রেট ও পূর্ন:বাসন ম্যাজিষ্ট্রেট ছিলেন তিনি। ১৯৮৩ সালে মহকুমা প্রশাসক ছিলেন, জনাব শহিদ উল্ল্যাহ এ.এস.ডি.ও। কিছুদিন পর তিনি পূর্ণাঙ্গ (এস.ডি.ও) মহকুমা প্রশাসক হিসেবে পদন্নতি পান। ওই সময় জনাব এ.কিউ.এম শফিকুল ইসলাম এ.এস.ডি.ও এবং ২য় শ্রেণির ম্যাজিষ্ট্রেট ও নির্বাচন অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
১৯৭০ সালের ৯ অক্টোবর আলীকদম, নাইক্ষ্যংছড়ি, বাইশারী ও গজালিয়া নিয়ে লামা মহকুমা উন্নীত করা হয়। বর্তমানে লামা উপজেলায় ১৮টি মৌজা, একটি পৌরসভা, ৭টি ইউনিয়ন ৫০০টি পাড়া ও প্রায় হাজারটি গ্রাম রয়েছে। জেলার মোট জনসংখ্যার এক তৃতীয়াংশেরও বেশি মানুষ এই উপজেলায় বসবাস। এ কারণে জেলার রাজনৈতিক গুরুত্ব বিবেচনায় লামাকে দেখা হয়। এরশাদ সরকার ৮০’র দশকে দেশের ৪৭ টি মহকুমাকে পুর্নাঙ্গ জেলা ঘোষণা করলে লামা জেলা ঘোষিত হয়। এর কয়েকদিন পর কম জনসংখ্যা, দুর্গম যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে “লামা জেলা” কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছিল।
বর্তমানে লামা একটি ২য় শ্রেণির পৌরসভা। জনসংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে সমাজ-সভ্যতার অনেক অগ্রগতি হয়েছে। এখনো লামা জেলার স্মৃতিচিহ্ন ও সময়ের স্বাক্ষী হয়ে আছে; ম্যাজিষ্ট্রেট আদালত, জেলা তথ্য অফিস, সহকারি পুলিশ সুপার, সড়ক ও জনপথ, উপ-পরিচালক বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন, উপসহকারি প্রকৌশলী গনপূর্ত, উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর-এর অফিস, বিভাগীয় বন কার্যালয়, ও অধিগ্রহনকৃত জেলখানার ভুমি, পুলিশ লাইন ও পুলিশ সুপারের কার্যালয়, আনসার ভিডিপি ট্রেনিং সেন্টারের ভুমি। এছাড়া একটি বিদ্যুৎ সঞ্চালন উপকেন্দ্র, সড়ক ও জনপদের কার্যালয়। রয়েছে একটি সরকারি ডিগ্রি কলেজ, ডিগ্রি মাদ্রাসা, আরেকটি বেসরকারি কলেজ, একটি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, ১৪টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ৮৪টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, রয়েছে সম্ভাবনাময় কয়েকটি পর্যটন স্পট, এর মধ্যে মিরিঞ্জিা, কোয়ান্টম, সাবেক বিলছড়ি বৌদ্ধমন্দ্রিরসহ উপজেলার বুকছিড়ে সাপেরমত একেবেকে বয়ে যাওয়া মাতামুহুরী নদীর নান্দঁনিক দৃশ্য। ১টি পৌরসভা ও ৭টি ইউনিয়নে মোট মৌজা ১৮। উপজেলার মোট আয়তন : ৬.৭৪ বর্গ কিলোমিটার, ভোটার সংখ্যা ৬২ হাজার।
উত্তর দক্ষিণে লম্ববান, লামা উপজেলার ভু-ঢালু পশ্চিম মূখী। ছোট-বড় অসংখ্য পাহাড় আর জলদ্বার নিয়ে এই উপজেলায় বসবাস করছেন ৫ সম্প্রদায়ের মানুষ। উপজেলায় তিন লক্ষাধিক জনবসতি রয়েছে। মাতামুহুরী নদীর উপরদিয়ে নির্মিত বেশ কয়েকটি গার্ডার ব্রীজ হয়ে পৌরসভা ও ৭টি ইউনিয়নের সাথে সদরের রয়েছে কার্পেটিং, এসবিবি ও কাচাঁ সড়ক নেট ওয়ার্ক।


চলবে... 
*****************************************************************************