Check PAGE RANK of Website pages Instantly

Check Page Rank of your Web site pages instantly:

This page rank checking tool is powered by PRChecker.info service

Saturday, August 19, 2017

লামা-আলীকদমে এক নারী উদ্যাক্তার এগিয়ে চলার গল্প...



লামা-আলীকদমে এক নারী উদ্যাক্তার এগিয়ে চলার গল্প
কার্টেসিঃ মোহাম্মদ কামারুজ্জামান, সাংবাদিক, লামা, বান্দরবান পার্বত্য জেলা।

কক্সবাজার আইন কলেজের ২য় বর্ষের ছাত্রী ইসরাত জাহান খুকী। ভবিষ্যতে আইন পেশায় কাজ করার স্বপ্ন দেখেন সে। এ স্বপ্ন পূরণের আগেই ইসরাত জাহান খুকী ২০৪১ সালের উন্নত বাংলাদেশ গড়ার বাস্তবমুখি প্রয়াস নিচ্ছেন। তার অবিচল আস্থা, বিশ্বাস ও পরিশ্রমে আমাদের রক্ষণশীল সমাজ ব্যবস্থায় উন্নয়নের ক্ষেত্রে সমগ্র সমাজ মানস নারীবান্ধব হবে। এতে করে ২০৪১ সালের উন্নয়নশীল বাংলাদেশ গড়ার প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণাটি ত্বরান্বিত করবে। অর্থনৈতিক উন্নয়নে নারীর অগ্রযাত্রায় সকল প্রতিবন্ধকতা মোকাবেলা করার প্রত্যয় নিয়ে এগিয়ে চলছে খুকী। গত তিন বছর ধরে লামা শীলের তুয়া, আলীকদম রেপাড়পাড়া এলাকায় মৎস্য ও সবজি চাষ করে পা পা করে সফলতার সীঁিড় বেয়ে উঠছেন এই নারী উদ্যাক্তা। এক সাথে ৮/১০ একর সমতল জমি পেলে সে কৃষি ভিত্তিক শিল্প গড়তে পারবে এই অঞ্চলে।

তার জম্ম কক্সবাজার জেলাধীন পেকুয়া উপজেলায়। বাবা সিভিল ইঞ্জিনিয়ার জহির হোসাইন অ্যামেরিকা প্রবাসী। মা একটি স্কুলের ইংলিশ টিচার। ৪ বোনের মধ্যে সে তৃত্বীয়, ভাই দুজন। তিন বছর আগে পৈত্রিক সম্পত্তি রক্ষার জন্য তার লামা-আলীকদমে আগমন ঘটে। সম্পত্তি সংক্রান্ত বিষয়ে কোর্ট কাচারীতে সময় দেয়ার ফাঁকে এখানকার নানাবিধ সম্ভাবনা তার নজর কাটে। সময়ের চাহিদা বিবেচনা করে সে প্রথমে ক্ষুদ্রাকারে সবজি চাষ শুরু করে। দিন দির এর পরিধি বৃদ্ধি পেয়ে আইন পেশায় পড়ালেখার পাশাপাশি এখন সে তিন একর জমিতে মৌসুমি সবজি চাষ করে প্রচুর আয় করেছেন। এছাড়া চারটি বড় পুকুর লীজ নিয়ে কার্পজাতীয় মাছের চাষ করেন খুকী। এর মধ্যে সে একটি সেগুনের নার্সারী গড়ে তুলেন। লামা আলীকদ উপজেলার বিভিন্ন প্রান্তে রয়েছে তার নানান জাতের ফলজ বাগান।
১৯ আগষ্ট এই প্রতিনিধির সাথে এক আলাপচারিতায় ইসরাত জাহান খুকী জানান, তার বর্তমান বিনিয়োগকৃত মূলধনের পরিমান প্রায় পঁঞ্চাশ লাখ টাকা। বারোমাস তার অধিনে ১০/১২ জন মানুষ কাজ করে তাদের সংসার চালাচ্ছে। এছাড়া মৌসুমে আরো বেশি মানুষ তার অধিনে কাজ করার সুযোগ পান। সে বলেন, ৮/১০ একর সমতল ভূমি এক সাথে পেলে সে নতুন কিছু করে দেখাবে। এই এলাকার মাটি ও মানুষের রয়েছে উজ্জল সম্ভাবনা। যোগাযোগ, নিরাপত্তা ও সামাজিক স্থীতিশীলতা সব ধরণে ব্যবসার অনুকুল পরিবেশ রয়েছে লামা-আলীকদমে। এই এলাকা পশুপাখি পালনের এক উর্বর ক্ষেত্র দাবী করে সে জানায়, তিতির পাখি, পঙ্খীরাজ, ব্লাক বেঙ্গল ছাগল, টার্কি কবুতর, তুরকি মোরগ, টার্কি মোরগসহ ডেইরি খামার গড়ে উঠার বিস্তর সম্ভাবনা রয়েছে এখানে।
খুকী বলেন, বিশ্ব বাজারে এ ধরণের পশুপাখির মাংসের প্রচুর চাহিদা রয়েছে। তা ছাড়া এখানে রোগবালাই না থাকায় কিংবা কম থাকায়, পশু-পাখির পাশাপাশি বিভিন্ন ফলমুল সবজির চাহিদাও ব্যাপক রয়েছে। এই এলাকায় অন্যান্য পোল্ট্রি প্রজাতির তুলনায় তিতির পাখি পালনের বেশ সুবিধা রয়েছে। কারণ এর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অন্যান্য পাখির চেয়ে বেশি। সংক্রামক বা পরজীবীঘটিত কোনটাই সহজে আক্রান্ত করতে পারে না। এ পাখির খাদ্য খরচও কম। একটি পূর্ণবয়স্ক তিতির দৈনিক ১১৮-১২০ গ্রাম খাবার খায়। কচি ঘাস, পোকামাকড়, সবজি এদের প্রিয় খাদ্য। সূতরাং এখানকার পরিবেশ এদের খাদ্যানুকুল। সম্পূরক খাদ্যের পরিমান কম লাগে। এদের জন্য ভাল মানের ঘর লাগে না এবং খুব বেশী সরঞ্জামের প্রয়োজন হয় না। এ পাখির শারীরিক বৃদ্ধিও হার বেশ ভালো এবং মাংস অনেক সুস্বাদু ও পুষ্ঠিকর। তিতির পাখির ডিম ও মাংস খাদ্য হিসাবে ব্যবহারের জন্য কোন ধর্মীয় বাধা নেই। একটি দেশী মুরগী যেখানে বৎসরে ৫০-৬০ টি ডিম দেয়, সেক্ষেত্রে একটি তিতির পাখি ১০০-১২০ টি ডিম দেয়। প্রতিকূল পরিবেশের সাথে এরা নিজেকে মানিয়ে নিতে পারে।

টার্কি পাখি প্রসঙ্গে এই নারী উদ্যাক্তা জানায়, এটি উত্তর আমেরিকার একটি বড় ধরনের পাখি। আমাদের দেশে অনেকে টার্কিকে তুর্কি মোরগবলে। তুর্কি মোরগের গোশত সুস্বাদু। আমেরিকানরা বিশেষ দিন উপলক্ষে যেমনÑ ধন্যবাদ প্রদান (থ্যাঙ্কস গিভিং) ও খ্রিষ্টমাসের দিন টার্কির গোশত খেতে পছন্দ করে। মার্কিন নেতা বেঞ্জামিন ফ্রাঙ্কলিন এই পাখিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় পাখি করতে চেয়েছিলেন, বল্ড ঈগলকে নয়। পরে কিন্তু বল্ড ঈগল ওই দেশের জাতীয় পাখি হয়। বিভিন্ন প্রজাতির ও রঙের তুর্কি মোরগ রয়েছে। পাহাড়ি অরণ্যের বনে বন্য টার্কি পাওয়া যায় । ঝোপে এরা বাসা তৈরি করে ও ডিম পাড়ে। এরা একসাথে ১৮টির বেশি ডিমে তা দেয়। এক মাস পরে ডিম ফুটে বাচ্চা বের হয়।
সে জানায়, আমাদের দেশের বনে একসময় টার্কি ঠছল; বর্তমানে বন উজাড় হওয়ায় টার্কি এখন বিলপ্তির পর্যায়। এসব পাখি পালন করা হলে একদিকে বৈদেশিক মুদ্রার্জন হবে, অন্যদিবে জীববৈচিত্র রক্ষা পাবে বলে জানান এই তরুণ নারী উদ্যোক্তা। বর্তমানে সে আইন পেশায় অধ্যাবসায়ের পাশাপাশি এসব কিছু করছেন। সে আরো নতুন নতুন সম্ভাবনার দিক নিয়ে ভাবছে। সাপ্তাহের প্রতি শুক্রবার বিকালে কক্সবাজার আইন কলেজে ক্লাস শেষ করে আবার সে প্রকল্প এলাকায় ফিরেন। এই তরুণির কর্মদ্যোম প্রচেষ্টা এলাকার নারী সমাজকে আত্মনির্ভর হতে অনুপ্রাণিত করছে। সে সাথে বাংলাদেশকে উন্নত দেশে পরিনত করার এক গর্বিত অংশিদার হয়ে উঠছেন। আমাদের সমাজ এই নারী উদ্যোক্তাকে সহায়তা করবেন, এমনটি আশা সকলের।