Check PAGE RANK of Website pages Instantly

Check Page Rank of your Web site pages instantly:

This page rank checking tool is powered by PRChecker.info service

Wednesday, August 23, 2017

লামা উপজেলা পরিক্রমা: ধারাবাহিক প্রতিবেদন-০১



কার্টেসিঃ মোহাম্মদ কামারুজ্জামান, সাংবাদিক, ছবি: আমির আজিজ, লামা, বান্দরবান পার্বত্য জেলা।
 
নয়ন জুড়ানো সবুজ স্নিগ্ধ বনানী ঘেরা নৈসর্গিক সৌন্দর্য ও বিপুল প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর অরন্যরানী লামা। এখানে রয়েছে সর্পিল ঢেউ খেলানো অসংখ্য ছোট-বড় পাহাড় ও পাহাড়ের বুক চিড়ে বহমান নদী। মনোরম দৃশ্যের সমাহার ও বৈচিত্র্যময় সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকারে সমৃদ্ধ লামা, ঠিক যেন শিল্পীর পটে আঁকা ছবির মতন। সর্বত্র সবুজ-শ্যামল গিরি শ্রেনীর এক অপরূপ চিত্র বৈচিত্রময় হাতছানি। বাঙ্গালী ও উপজাতির মধ্যে সম্প্রীতির বন্ধন এ উপজেলার অন্যতম বৈশিষ্ঠ্য। ভৌগলিক অবস্থানগত দিক থেকে পাহাড় ও নদী বেষ্টিত হওয়ায় দেশের অন্যান্য জেলা উপজেলার চেয়ে পুরোপুরি বৈচিত্র্যময় বলা চলে। উপজেলার দক্ষণে- আলীকদম ও নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা, পশ্চিমে- কক্সবাজারের রামু ও চকরিয়া এবং চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলা, উত্তরে- বান্দরবানের সুয়ালক ইউনিয়ন, পূর্বে- বান্দরবানের থানছি ও রুমা উপজেলা। ৬৭১.৮৪ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের মধ্যে নদী এলাকা ৭৮.১৭৩ বর্গ কিলোমিটার, সংরক্ষিত বনভূমি ৩৩২.৮২৭ বর্গ কিলোমিটার ও চাষাবাদযোগ্য ভূমির আয়তন ২৬০.৮৪৫ বর্গ কিলোমিটার। বর্তমানে যার অধিকাংশই আবাদ করে গড়ে উঠেছে বসতি। উপজেলাটি ২১.৩৬ হতে ২১.৫৯ উত্তর আংশ এবং ৯২.০৪ হতে ৯২.২৩ পূর্ব দ্রাঘিমাংশে ও সমুদ্র পৃষ্ট থেকে ২৯.৮৭ মিটার উপরে অবস্থিত। এখানকার পাহাড় সমুহের উচ্চতা ২ শ’ থেকে ৩ শ’ মিটার। এক সময়ের দুর্গম পাহাড়ি লামা বর্তমানে কোলাহলপূর্ণ বিকাশমান পর্যটন শহর। এখানের অপরম্নপ প্রাকৃতিক শোভা, বয়ে চলা পাহাড়ী আঁকা-বাঁকা মাতামুহুরী নদী, দুঃখি ও সম্মুখ পাহাড়ের উঁচু চুড়া, বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের তীর্থমান হিসেবে পরিচিত সাবেক বিলছড়ি মহামুনি বৌদ্ধ বিহার ও কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন ইত্যাদি দেশ-বিদেশের ভ্রমন বিলাসী পর্যটকদের সহজে আকৃষ্ট করে। তাছাড়া এ উপজেলায় বসবাসরত নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠির রয়েছে আলাদা ভাষা ও সংস্কৃতি। এদের অনেক রীতিনীতি কৃষি, সামাজিক জীবনাচার ও গৌরবময় সাংস্কতিক ঐতিহ্য বাংলাদেশের সংস্কৃতিকে মহিমান্বিত এবং বৈচিত্র্যময় করেছে।


মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস : মুক্তিযুদ্ধের কৃতি সন্তান শহীদ আবদুল হামিদ আমাদের অহংকার ঃ
***********************************************************
শহীদ আবদুল হামিদ (মার্চ ৪, ১৯৫০-নভেম্বর ১৯, ১৯৭১) বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের কক্সবাজার জেলার অন্যতম সংগঠক। তিনি গেরিলা যুদ্ধের নেতৃত্ব দেন এবং তাঁকে গ্রেপ্তার করে অমানুষিক নির্যাতন ও মস্তক ছিন্ন করে হত্যা করা হয়। দেশের জন্য প্রাণ উৎসর্গ করে তিনি শহীদ উপাধিতে ভূষিত হন।
মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে অত্র লামা উপজেলায় মুক্তি বাহিনীর স্থায়ী-অস্থায়ী কোন ঘাটি ছিল বলে জানাযায়নি। তবে এ উপজেলার কোলঘেসে কক্সবাজার জেলাধীন চকরিয়া উপজেলার বর্তমান বমুবিলছড়ি ইউনিয়নে জাতির শ্রেষ্ট সন্তান শহীদ আবদুল হামিদের জম্মগ্রাম। লামা চাম্পাতলী গ্রামেছিল পাক হানাদার বাহিনীর আস্তানা (থানা)। সেই আস্তানায় ১৯৯৭১ সালে শহীদ আবদুল হামিদকে রাতের বেলায় পাকবাহিনীর দোসররা তার বাসা থেকে ধরে এনে তেঁতুল গাছের সাথে রাতভর পা উপর করে বেধে রাখে। পরেরদিন কক্সবাজার নিয়ে যাওয়ার কয়েকঘন্টা পূর্বে স্থানীয়দের অনুরোধে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আটকে রেখে চরম নির্যাতন করা হয়েছিল। অমানসিক নির্যাতনের পরেও এই বীরের মূখ থেকে “জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু” ছাড়া কোন শব্দ বের করাতে পারেনি পাকিস্তানি মেজর জামান অনুসারিরা।

জাতির শ্রেষ্ট সন্তান শহীদ আবদুল হামিদ :
কক্সবাজার পাক সেনা ঘাটিতে ক্যাপ্টেন আসিফ রিজভী কর্তৃক পকেট তল¬সীর উদ্দেশ্যে উদ্ধ্যত হলে তিনি গর্জে উঠে বলেছিলেন, “ঝঃড়ঢ় উড় ুড়ঁ হড়ঃ শহড়ি ও ধস ধ পরঃরুবহ ড়ভ ইধহমষধফবংযর? ুড়ঁ সঁংঃ নব সু ঢ়বৎসরংংরড়হ নবভড়ৎব ঈযধৎমব সব”
“তোমাদের পদানত হতে আমার জন্ম হয়নি। আমি এখন তোমাদের বন্দী, যা খুশী তোমরা করতে পার”
জাতির শ্রেষ্ট সন্তান বীর শহীদ আবদুল হামিদের স্মৃতিচারণ হচ্ছে না খোদ তার জম্মস্থান (গ্রাম) বমুবিলছড়িতে। একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ব্যতিত বমুবিলছড়ি ইউনিয়ন ও ১৯৭১ সালে যে এলাকা পাক শত্রুমুক্ত করার জন্য জীবন দিলেন, লামা-আলীকদমে তার স্মৃতি বিজড়িত কিছুই নেই। এই বীর শহীদের নামে নাম করণ হতে পারে “ শহীদ আবদুল হামিদ চম্পাতলী প্রাইমারি স্কুল” যে ঘরে পাক বাহিনী আটক রেখে আবদুল হামিদকে প্রথম টর্চার করেছিল। লামা থেকে বমুবিলছড়ি সড়ক ও মাতামুহুরী সেতুটি হতে পারে এই বীর শহীদের নামে। এছাড়া অন্যান্য সড়ক, স্কুল, কলেজ, আরো অনেক স্মৃতি চত্বর হতে পারে তাঁর নামে। শহীদের জীবনি-স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাস নিয়ে বীর শহীদ আবদুল হামিদের স্মৃতিগাতা স্বারক সমুহ বহন করবে আমাদের স্বাধীনতাযুদ্ধে বীর শহীদদের আত্মত্যাগের ইতিহাস। সময় পরম্পরায় প্রজম্মের হ্নদয়ে জেগে থাকবে, বাংলার মুক্তি সেনাদের গৌরবোজ্জল কাহিনী। বমুবিলছড়ি ইউনিয়নসহ লামা-আলীকদমে শহীদ স্মৃতি স্বারকের দাবী তুলেছে বর্তমান প্রজম্ম। 

মহান মুক্তিযুদ্ধে আবদুল হামিদের ভূমিকা :
****************************
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হলে আবদুল হামিদসহ আরও চারজন মিলে দেশকে শত্রুমুক্ত করার অভিলাষে ভারত এর মিজোরাম রাজ্যের দেমাগ্রীতে গেরিলা প্রশিক্ষণের জন্য চলে যান। ভারতের উদ্দেশ্যে পাড়ি জমার আগেই বাড়ি থেকে বিদায় নেওয়ার মুহুর্তে তার অগ্রজ বড় ভাই এজাহার হোসাইনকে বললেন, ‘দাদা আমি তাহলে যুদ্ধের প্রশিক্ষণ গ্রহণের জন্য ভারতের পথে পাড়ি দিলাম। “এখানে কাপুরুষের মতো বসে থাকার অপরাধ কোন দিন ইতিহাস ক্ষমা করবে না”। “আল্লাহ যদি ফিরিয়ে আনে দেখা হবে, দোয়া করবেন”।’ ১৮ মে ১৯৭১ তিনি সকলের থেকে বিদায় নিয়ে ১৩ জন মুক্তিযোদ্ধা নিয়ে লামা হয়ে দুর্গম পাহাড়ী পথে ভারতের উদ্দেশ্যে পাড়ি দেয়। গভীর জঙ্গল অতিক্রম করে পাহাড়ের পর পাহাড় ডিঙ্গিয়ে গাছের ফলমূল ও বুনো মুরগীর মাংস আগুনে ঝলসে ক্ষুধা মিটিয়ে প্রায় ১০দিন পর ভারতের মিজারাম প্রদেশের দেমাগ্রিতে পৌঁছেন। সেখানে তিনি ভারতীয় সেনাবাহিনীর অধীনে স্বল্পকালীন গেরিলা প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন।
ভারত থেকে ট্রেনিং নিয়ে আবদুল হামিদের নেতৃত্বে এক দু:সাহসিক যোদ্ধাদল বাংলাদেশের কক্সবাজার মহকুমার চকরিয়ায় ফিরে আসে। এ দলের সেকেন্ড ইন কমান্ড ছিলেন নজির আহমদ। অন্য যারা ছিলেন তাদের মধ্যে জহিরুল ইসলাম সিদ্দিকী (প্রখাত সাহিত্যিক সাংবাদিক মোহাম্মদ আবদুর রশিদ সিদ্দিকীর ছেলে), মোজাম্মেল হক, মোহাম্মদ ইউনুছ, আনোয়ার হোসেন বাঙ্গালী, এনামুল হক (শহীদ), সন্তোষ, সুনীল, বেলাল, অমূল্য, শ্রীমন্ত, অনীল, ধনঞ্জয় দাশ, দুলাল, এস এম কামাল, আবু তাহের, রমজান আলী বাহাদুর, আমির হামজা, শাহাদাৎ হোসেন, নুর হোসেন, সিরাজুল ইসলাম, সাধন, জয়নাল আবেদিন, মোহাম্মদ মুছা, (এ মুছার জন্যেই তাকে শহীদ হতে হয়েছে), নুর মোহাম্মদসহ আরো অনেকে। প্রশিক্ষণ শেষে সবাইকে হাবিলদার আবুল কালাম (সশস্ত্রযুদ্ধে শহীদ আবদুল হামিদ) সহ কয়েকজন মিলে গেরিলা দলের নেতৃত্বে পার্বত্য বান্দরবানরে লামা, আলীকদম ও চকরিয়ার এলাকায় বিভিন্ন কৌশলে হানাদার বাহিনী এবং তাদের দোসর রাজাকারদের উৎখাত করে।

আবদুল হামিদ যেভাবে শহীদ হলেন
*************************
আবদুল হামিদ নিজের দল নিয়ে বান্দরবান জেলাধীন লামা থানা আক্রমণ করে বিরাট সাফল্য অর্জন করেন (তারিখটি জানা যায়নি)। শত্রুসেনার সমস্ত অস্ত্রশস্ত্র তাদের হস্তগত হয়। এই অস্ত্রের মধ্যে ছিল ৩৮টি থ্রি নট থ্রি রাইফেল ও ৩৭০০ রাউন্ড গুলি। ওই অপারেশনে ১ জন রাজাকার নিহত ও ২ জন পুলিশ ধৃত হয়। পরে ধৃত পুলিশ সদস্যরাও তাঁদের দলে যোগ দেন। লামা থানা অপারেশনের পর আবদুল হামিদ অন্য আরেকটি গেরিলা গ্রুপের সাথে দেখা করতে আজিজনগর যান। এর মধ্যে তার মা অসুস্থ হয়ে পড়েন। অসুস্থতার খবর পেয়ে মাকে দেখতে আসার সময় পাহাড়ী দুর্গম পথে পিছলে পড়ে তাঁর পা মচকে যায়। আহত পা নিয়ে তিনি মায়ের সাথে দেখা করতে বমুর বাড়িতে যান। এটাই ছিল মায়ের সাথে আবদুল হামিদের শেষ দেখা।
এদিকে হানাদার বাহিনী হামিদের সন্ধানে দেশীয় রাজাকারদের লেলিয়ে দেয়। হামিদের নেতৃত্বে একটি দল যখন চকরিয়ার বিষফোঁড়া গণদুশমণ মেজর জামানকে চরম শাস্তি দেবার লক্ষ্যে উপায় উদ্ভাবন করেছিলেন, এ খবর পাকিস্তানি দোসর লামার রাজাকার মুছা হানাদার বাহিনীকে গোপনে জানিয়ে দেয়। ৪ নভেম্বর পাকিস্তানি দালাল জামায়াতের নেতৃত্বে রাজাকার গফুরের দল মুছাসহ অতর্কিত হামিদের বমুবিলছড়ি বাড়িতে আক্রমণ করে। হামিদকে ধরার জন্য তারা এগিয়ে আসলে হামিদ অন্ধকারে তাঁর রিভলভারটি না পেয়ে গ্রেনেড চার্জ করেন। কিন্তু দুঃখজনকভাবে গ্রেনেডের ডেটোনেটর সঠিকভাবে না খোলায় গ্রেনেডটি বিস্ফোরিত হয়নি। হামিদ তাঁর ভগ্নিপতি আজমল হোছাইন এবং বড় ভাই তমিজউদ্দিনসহ ধরা পড়লেন। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে হামিদকে রক্ষার জন্য স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতারা মাতামুহুরী প্রতিরোধ করার চেষ্টা চালায়। কিন্তু পাকিস্তানী দোসরের সহায়তায় পাকিস্তানি বংশধর বাঙালি অবসরপ্রাপ্ত মেজর জামান কক্সবাজারে পাকিস্তানি সেনা দপ্তরে ওয়ারলেসে সংবাদ পাঠায়। পাক হানাদার বাহিনীরা আকাশ বাতাস বিদীর্ণ করে চকরিয়ায় ঘরবাড়ী জ্বালিয়ে ধোয়ার কুন্ডলী সৃষ্টি করে মাতামুহুরী তীরের ঐক্যবদ্ধ জনতার আক্রমণকে ছত্রভঙ্গ করে দেয়। আবদুল হামিদকে প্রথমে লামা চাম্পাতলী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে রাতভর নির্যাতন চালিয়ে পরের দিন কক্সবাজার থেকে ২ প¬াটুন পিসি আর্মস ফোর্স এনে সন্ধ্যার আগে তাঁদের নিয়ে ৪টি নৌকা পাক আর্মিসহ রওনা দেয় মাতামুহুরী নদী পথে। নৌকা চারটি খুব সাবধানে কাকারার মাঝের ফাঁড়িতে পৌঁছে। কাকারা থেকে তাঁদেরকে গাড়িতে তোলা হয়। রাত বারোটার দিকে পাক কনভয়টি কক্সবাজার সার্কিট হাউজে পৌছায়। এর পর তাঁদেরকে একটি কক্ষে তালাবদ্ধ করে রাখা হয়। রাত একটার দিকে শুরু হয় অকথ্য নির্যাতন। পা উপরের দিকে ছাদের রডের সাথে বেঁধে মাথা নিচের দিকে ঝুলিয়ে অমানুষিক নির্যাতন করা হত। জিজ্ঞেস করা হত সহযোগী মুক্তিযোদ্ধাদের নাম, ঠিকানা, অস্ত্রশস্ত্র ও গোলাবারুদ সম্পর্কে। টর্চার সেলে দায়িত্বে ছিলেন, ভয়ঙ্কর নিষ্ঠুর পাঞ্জাবী কমান্ডিং অফিসার ক্যাপ্টেন আসিফ রিজভী ও তার সহযোগী হাবিলদার সফদলার আলী আফ্রিদী। তাদের দুই জনের নির্যাতন ও অত্যাচারের ধরন হিটলারের মতন ছিল। কক্সবাজার সেনা ঘাটিতে পাক বাহিনীর ক্যাপ্টেন আসিফ রিজভী তাঁর জামার পকেট তল¬সীর উদ্দেশ্যে হাত দিতে উদ্ধ্যত হলে তিনি গর্জে উঠে বলেছিলেন, “ঝঃড়ঢ় উড় ুড়ঁ হড়ঃ শহড়ি ও ধস ধ পরঃরুবহ ড়ভ ইধহমষধফবংযর? ুড়ঁ সঁংঃ নব সু ঢ়বৎসরংংরড়হ নবভড়ৎব ঈযধৎমব সব” তাঁর উপর অমানুষিক নির্যাতন করেও কোন তথ্য বের করতে পারেনি। আবদুল হামিদ শেষ বারের মত বলেছিলেন ‘আমি বাঙালি, দেশের স্বাধীনতার বিরুদ্ধে আমি একটি শব্দও উচ্চারণ করবো না। তোমাদের পদানত হতে আমার জন্ম হয়নি। আমি এখন তোমাদের বন্দী, যা খুশী তোমরা করতে পার। আমি কোন কথা বলবোনা। তাঁর এ নির্ভীক বীরত্বপূর্ণ উচ্চারণ ও আচরণ দেখে রিজভীর মতো নরপশুও মন্তব্য করেছিলেন, “হামিদের মতো ছেলে যে দেশে জন্মায়, সে দেশ স্বাধীন না হয়ে পারেনা।’’এসময় তাঁর বড় ভাই তমিজউদ্দিন প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষক পরিচয়ে ছাড়া পায়। আর একসপ্তাহ পর ভগ্নিপতি আজমল হোছাইনকে কারাগারে পাঠানো হয়। 

শহীদ আবদুল হামিদ-এর মৃতদেহ উদ্ধার এবং একজন সুফি সাদকের পাশে সমাহিত :
*****************************************
**************
১৯ নভেম্বর/১৯৭১ কক্সবাজার টর্চার সেল থেকে আবদুল হামিদকে নিয়ে যাওয়া হয় টেকণাফ বধ্যভূমিতে। ওইদিন ১৯ নভেম্বর/৭১ শুক্রবার তাঁকে প্রথমে ডানবাহুতে গুলি করলে তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন; এসময় ‘পাকিস্তান জিন্দাবাদ’ বলার নির্দেশ দেয়া হয়; জবাবে আ: হামিদ ‘জয়বাংলা’ বলে বজ্্রকন্ঠে হুংকার দিয়ে দাড়িয়ে যায় (!) এভাবে বামবহুতে পরে বুকে ব্রাশ ফায়ার তার পর জবাই করে হত্যা করে এই বীরকে। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর দেশ হানাদারমুক্ত স্বাধীন হওয়ার পর স্বজন এবং সহযোদ্ধারা পুরো কক্সবাজার এলাকায় অনেক খোঁজার পর টেকণাফের একটি বধ্যভূমি থেকে অগনিত পঁচা লাশের মধ্য থেকে খয়রি রং-এর পাঞ্জাবির চিহ্ন ধরে হামিদের মস্তকবিহীন লাশ উদ্ধার করা হয়। শহীদের ভাতিজা বান্দরবান জেলা পরিষদের সদস্য সাবেক ছাত্র নেতা মোস্তফা জামাল জানায়, পূর্ব অছিয়ত অনুযায়ী ২৪ ডিসেম্বর/৭১ শুক্রবার চকরিয়ার কাকারা ইউনিয়নের শাহ উমর (রহঃ) এর মাজার সংলগ্ন কবরস্থানে শহীদ আবদুল হামিদকে সম্পূর্ণ সামরিক কায়দায় ২১ বার তোপধ্বনির মাধ্যমে সমাহিত করা হয়। তাঁর সমাধিফলকে লিখা আছে “যাঁদের রক্তে মুক্ত এ দেশ তাঁদেরই একজন শহীদ আবদুল হামিদ”। 
চলবে... 
*****************************************************************************