Check PAGE RANK of Website pages Instantly

Check Page Rank of your Web site pages instantly:

This page rank checking tool is powered by PRChecker.info service

Saturday, October 28, 2017

লামার পাহাড়ে কমলা চাষে সবুজ বিপ্লব!



কার্টেসিঃ নুরুল করিম আরমান, সাংবাদিকলামাবান্দরবান পার্বত্য জেলা।
 **************************************************************************************
অর্থনীতির ফুয়েল হিসেবে তো অনেক কিছুই আছে। বাংলাদেশের সোনালী আঁশ পাট কিংবা সাদা সোনা হিসেবে চিংড়ির সুনাম যথেষ্ট আছে। এগুলোই এখন অর্থনীতির চালিকা শক্তি হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। কিন্তু, বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে কমলা যখন অর্থনীতির চালিকা শক্তি হয়, তখন অবাক হওয়াই স্বাভাবিক। বান্দরবানের কৃষকরা এখন সবুজ কমলা চাষেই মনোযোগী বেশি।
বান্দরবান জেলার পাহাড়গুলোতে কমলার চাষ অর্থনীতির নতুন বুনিয়াদ গড়ছে। আর্থিক সচ্ছলতার অপার সম্ভাবনা দেখে পাহাড়িদের পাশাপাশি বাঙালিরাও কমলা চাষে ঝুঁকছে। চলতি মৌসুমে জেলার ৭টি উপজেলায় ২ হাজার ৮০ হেক্টর পাহাড়ি জমিতে কমলার চাষ হয়েছে। তবে পচনশীল এই ফলের যথাযথ সংরক্ষণাগার না থাকায় তারা আর্থিক ঝুকিতেও রয়েছেন চাষীরা। পাহাড়ে দিন দিন এ কমলা চাষের পরিধি বৃদ্ধি পাচ্ছে। কদরও বাড়ছে কমলার। এখানকার পাহাড়ের মাটি, আবহাওয়া কমলা চাষের উপযোগি।
এবার জেলায় ২৯ হাজার ১২০ মেট্রিক টন কমলা উৎপাদন হয়েছে। প্রতিদিনই এখানে উৎপাদিত কমলা ঢাকা, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে যাচ্ছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের মাধ্যমে বান্দরবানসহ তিন পার্বত্য জেলায় পরিকল্পিতভাবে কমলা চাষ শুরু করা হয় বলে জানা গেছে।

কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে বান্দরবানের লামা উপজেলায় ২৬০ হেক্টর, আলীকদম উপজেলায় ৬০ হেক্টর, নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলায় ১৫ হেক্টর, থানছি উপজেলায় ১২৪০ হেক্টর, রুমা উপজেলায় ৩২২ হেক্টর, রোয়াংছড়ি উপজেলায় ১৩০ হেক্টর ও সদর উপজেলায় ৬৩ হেক্টর পাহাড়ি জমিতে কমলার চাষ হয়েছে।
তবে বেসরকারী হিসেব মতে এর পরিধি দ্বিগুন হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ফলনও হয়েছে। এক সময় এখানের পাহাড়গুলোতে ফলদ, বনজ গাছের বাগান ও জুমের ব্যাপক আবাদ হতো। বেশ কয়েক বছর ধরে কমলার অঞ্চল হিসেবে পরিচিতি পেতে শুরু করেছে এ উপজেলা। এখানের অধিকাংশ পাহাড় এখন কমলার থোকায় ভরে উঠেছে। সর্বত্র সচরাচর বিক্রি হচ্ছে উৎপাদিত টসটসে এসব রসালো কমলা। এখানের কমলার স্বাদ ও আকারের দিক থেকে বিদেশ থেকে আমদানিকৃত কমলার চেয়ে কোনো অংশেই কম নয়।
সূত্র জানায়, পার্বত্য চট্টগ্রামে দারিদ্র বিমোচনের লক্ষ্যে ১৯৯৯ সালে তিন পার্বত্য জেলায় ৬শকৃষক পরিবারকে পুনর্বাসনের প্রকল্প হাতে নেয়ার মাধ্যমে পাহাড়ে কমলাসহ মিশ্র ফল চাষের প্রক্রিয়া আরম্ভ করে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড। প্রকল্পটি ছিল পার্বত্যাঞ্চলে ভূমিহীন ও প্রান্তিক চাষীদের কমলা ও মিশ্র ফসল চাষ। প্রকল্পে তিন পার্বত্য জেলা রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি এবং বান্দরবানে ৬শপরিবারের মাঝে ৬০০টি পরিবারকে পুনর্বাসিত করা হয়। পরিবারদের মাঝে ৪৫০টি কমলা, ৯০০টি কফির চারা, ৪৫০টি পেঁপে, ১৫০০টি কলা এবং ৩ হাজার আনারস চারা দেয়া হয়। লাভজনক হওয়ায় স্থানীয় পাহাড়িরা এখন জুম চাষের পরিবর্তে কমলা, মাল্টাসহ মিশ্র ফল চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বান্দরবানের রুমা উপজেলার ইডেন পাড়া, মুন্নম পাড়া, বেথেল পাড়া, এথেল পাড়া, বগালেক পাড়া, কৈক্ষ্যংঝিড়ি, পাইন্দু, রনিন পাড়া মুরংগ পাড়া, শঙ্খমনি পাড়া, থানচি উপজেলার এ্যাম্পু পাড়া, কুনাং পাড়া, জিনিংঅং পাড়া, মঙ্গী পাড়া, রোয়াংছড়ি উপজেলার বেতছড়া, গালেঙ্গ্যা, ঘেরাও, দোলিয়াম পাড়া, পোড়া পাড়া, লামা উপজেলার গজালিয়া, ফাঁসিয়াখালী, রুপসীপাড়া, লামা সদর ইউনিয়ন, আলীকদম উপজেলার লাংদি মুরুং পাড়া, কলারঝিরি, কাইন্দালা ঝিরি পাড়া এবং জেলা সদরের স্যারন পাড়া ও লাইলুনপি পাড়া এলাকায় গড়ে উঠেছে সাড়ে তিন শতাধিকেরও বেশি কমলা আর মাল্টা বাগান। চলতি বছর জেলায় প্রায় ৩৭০ হেক্টর জমিতে কমলা উৎপাদিত হয়েছে।
লামা উপজেলার গজালিয়া ইউনিয়নের লেবু পালং এলাকার চিন্তাবর পাড়ার কমলা চাষী সোচিং মুরুং জানান, ৩ একর পাহাড়ে কমলা আবাদ করেছেন। প্রথম বছর একর প্রতি বীজ সংগ্রহ, চারা পলিব্যাগ করা, জায়গা পরিস্কার, কীটনাশক ও শ্রমিক বাবদ ৩০ হাজার টাকা খরচ হলেও ৫/৬ বছর পর একে একে কমলা ধরা শুরু করে। অবৈজ্ঞানিক ভাবে বীজ সংগ্রহ করে পাহাড়ের মাছাংয়ের ওপর পলিব্যাগ করে চারা উৎপাদন করে শেষে পাহাড়ে চারা লাগিয়ে থাকেন চাষীরা। পরে প্রতি সপ্তাহ অন্তর অন্তর কমলা উত্তোলন করে বিক্রি করা যায়। তিনি এক একর কমলা বিক্রি করে পেয়েছেন প্রায় আড়াই লাখ টাকার বেশি।
কৃষি বিভাগের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মনছুর আলম বলেন, কমলার ভালো ফলন হয়েছে এবার উপজেলায়। এ অঞ্চলের মাটি এবং আবহাওয়া কমলা চাষের জন্য খুবই উপযোগী। পরিকল্পিতভাবে সরকারি-বেসরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় কমলা চাষ সম্প্রসারণ হচ্ছে। লাভজনক হওয়ায় জুম চাষের পরিবর্তে কমলা চাষে আগ্রহী হচ্ছে পাহাড়িরা। স্থানীয়দের চাহিদা মিটিয়ে উপজেলার কমলা এখন দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্রি হচ্ছে।
সরই ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ফরিদ উল আলম বলেন, আমার ইউনিয়নের লুলাইং এলাকায় উৎপাদিত কমলাগুলো খুবই সুস্বাদু এবং সাইজে বড়। বাগানের কয়েকশ কমলা গাছে ৫০ হাজারেও বেশি কমলা ধরেছে। কিন্তু ব্যবসায়ীরা চাষীদের অগ্রিম টাকা দিয়ে পাইকারি দামে কমলা বাগান কিনে নিচ্ছে। যোগাযোগ ব্যবস্থা এবং পরিবহন ও বাজারজাতকরণের সুবিধা না থাকায় ফড়িয়াদারদের কাছে দামমাত্র মূল্যে কমলা বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছে চাষীরা। বর্তমান বাজারে প্রতিটি কমলা ১০/১৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে ফড়িয়া ব্যবসায়ীরা দুর্গম থেকে একশ কমলা কিনছে মাত্র চারশ থেকে পাঁচশ টাকায়।
বান্দরবান জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সহকারী কৃষি কর্মকর্তা ভবতোষ চক্রবর্তী জানান, পার্বত্যাঞ্চল তথা বান্দরবানের পাহাড়ি মাটি কমলা চাষের উপযোগী। বাম্পার ফলনের পরও অগ্রিম বাগান কিনে নেয়ায় ফড়িয়া ব্যবসায়ীরা রঙ আসার আগেই থোকায় থোকায় ছোট কমলা ছিড়ে বাজারে বিক্রি করে দিচ্ছে। ফলে উৎপাদিত কমলার স্বাদ অনেক কমে যাচ্ছে এবং খেতে একটু টক লাগছে। এবার জেলায় ২ হাজার ৮০ হেক্টর জমিতে ২৯ হাজার ১২০ মে.টন কমলা উৎপাদন হয়েছে। কমলাগুলো বড় হওয়ার সুযোগ দিলে এবং সঠিক পরিচর্যায় কমলা বাগান সংরক্ষণ করা গেলে একদিন কমলা চাষের জন্য বিখ্যাত হবে অত্র বান্দরবানসহ তিন পার্বত্য জেলা। কমলা বিক্রির মাধ্যমে এখানের আরো শত শত চাষী স্বাবলম্বী হয়ে উঠবে। এছাড়াও কমলাসহ মৌসুমি ফল প্রক্রিজাত এবং বাজারজাতকরণের সঠিক ব্যবস্থা না থাকায় প্রতিবছর ২০-২৫ লাখ টাকার কমলা বাগানেই পঁচে যাচ্ছে।