****************************************** **************
লামায়
অর্থাভাবে চিকিৎসা বঞ্চিত এক মুক্তিযোদ্ধা সন্তানের বাঁচার আকুতি। মোখলেছ খাঁ (৫২)মুক্তিযোদ্ধা
বাবু খাঁর ২য় সন্তান। সে দীর্ঘদিন ধরে জন্ডিস ও লিভার সংক্রান্ত
ব্যাধিতে আক্রান্ত। অর্থাভাবে চিকিৎসা করাতে পারছেননা এই মুক্তিযোদ্ধা সন্তানের। সন্তানের
চিকিৎসার জন্য হণ্য হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন মুক্তিযোদ্ধা পত্নি আমেনা বেগম।
অতি কষ্টে জীবন যাপন করছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা বাবুখাঁ’র
পরিবার। ফরিদপুর জেলার ভাঙ্গা উপজেলায় ৬নং হামিরদী ইউনিয়নের ২ নং ওয়ার্ড মাবধপুর গ্রামের
বাসিন্দা দরিদ্র কৃষক, পিতা করিম খাঁ ও মাতা ছুটু খাতুন-এর সন্তান বাবু খাঁ। মুক্তি
বাহিনীতে যোগ দিয়ে ভারতে গিয়ে রণ প্রশিক্ষণ নিয়ে ৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন।
১৯৭১ সালে এই বীর যোদ্ধা নিজ জম্মস্থান ফরিদপুরের রণাঙ্গনে যুদ্ধরত ছিলেন। ১৯৭১ সালে
দেশ স্বাধীনের পর বাংলাদেশ সেনা বাহিনীর ১৬ ইসিবিতে চাকুরী হয় এই বীর যোদ্ধার।
স্বাধীনের কয়েক বছর পর, ১৯৭৮ সালে সেনা সদস্য হিসেবে বান্দরবান
জেলাধীন আলীকদম জোনে বদলী হয়ে আসে। নিজ জেলায় ফরিদপুরে জায়গা জমি না থাকায় ৭০ দশকের
শেষদিকে লামা উপজেলা ইয়াংছা গ্রামে ছোট্ট এক টুকরো পাহাড় কিনে বসতি শুরু করেন। ১৯৯৬
সালে মার্চ মাসের ১২ তারিখে অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে স্বাধীনতা স্বপক্ষের দল
বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ সরকার গঠন করবেন, ১৩ তারিখে টেলিভিশনের পর্দায় এমন সংবাদ শুনে খুশীতে
আত্মহারা হয়ে নিজ বাসায় হ্নদযন্ত্র বন্ধ হয়ে মারা যায় বীর মুক্তিযোদ্ধা বাবু খাঁ।
সব সময় জয়বাংলা বলতেন, সেই কারণে তার মৃত্যুর পর জানাযায়
মাত্র ৭ জন লোক অংশ নিয়েছিল(!) এসব কথা বলতে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন আমেনা বেগম। ইয়াংছা
গ্রামে নিজ ভুমিতে বসত ঘরের পাশে এই বীর চির নিদ্রায় শায়িত আছেন। ১৯৯৬ সালে দেশে রাজনৈতিক
প্রেক্ষাপট পরিবর্তন হলে, বীর মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা প্রণয়ন হয়। মুক্তিযোদ্ধা চুড়ান্ত
তালিকায় ও মুক্তি বার্তায় তালিকাভুক্ত, সর্বপুরী রণাঙ্গনের অকুতভয় এই বীর সেনা বাংলাদেশ
সেনা বাহিনীর একজন অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য হিসেবেও সফল যুদ্ধা ছিলেন। এই বীর মুক্তিযোদ্ধার ওয়ারিশ হিসেবে রয়েছে এখন তার স্ত্রী আমেনা বেগম। সাবেক সেনা সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা বাবু খাঁ’র অবসর ও মুক্তিযোদ্ধা ভাতা এবং নিজ উদ্যাগে করা একটি পুকুরে মাছ চাষ করে জীবিকা নির্বাহ করছেন মুক্তিযোদ্ধাপতিœ আমেনা বেগম। আয়ের একমাত্র উৎস ১টি পুকুর ছাড়া আর কিছু নেই। দিন মজুর ছেলেরা সামান্য আয় দিয়ে অর্ধাহারে-অনাহারে দিনাতিপাত করছেন। বাবু খাঁর মৃত্যুকালীন সময়ে তার স্ত্রী আমেনা বেগম, ছেলে ইলিয়াছ খাঁ, মোখলেছ খাঁ, আনছার খাঁ ও এক কণ্যা কোহিনুর খাঁসহ নাতি-নাতনি রেখে যান।
বীর মুক্তিযোদ্ধা বাবু খাঁ মৃত্যুর পর তার সহধর্মিনী আমেনা বেগম, তার জেলায় জম্ম নেয়া জাতির জনক ও জাতির জনক কন্যা শেখ হাছিনা তার দল বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের প্রতি ভালোবাসার নিদর্শন হিসেবে বাড়ির প্রধান ফটকে একটি নৌকার তৌরণ তৈরি করেন। এ স্বপ্ন তার মুক্তিযোদ্ধা স্বামী বাবু খাঁ’রও ছিল। কিন্তু তার জীবনকালে দারিদ্রতার কষাঘাতে সে স্বপ্ন পুরন করতে পারেননি। স্বামীর মৃত্যুর পর আমেনা বেগম বসত ভীটার একাংশ বিক্রি করে, সে অর্থে নৌকার গেইট তৈরির সামগ্রী; ইট-সিমেন্ট, রড ক্রয় করে সব টাকা শেষ হয়ে যায়। নৌকার তৌরণ তৈরির অধম্য ইচ্ছা মন থেকে শেষ হয়নি জাতির জনক ও তার কন্যা শেখ হাসিনাকে ভালবাসার পাগল মুক্তিযোদ্ধা পত্নি আমেনা বেগমের।
গ্রামের মানুষের ক্ষেতে খামারে দিন মুজরী করে টাকা জমিয়ে, সেই টাকায় তৌরণ নির্মান করেন। কয়েক বছর আগে তৈরি তৌরণটির বর্তমানে বিভিন্ন অংশে ফাটল ধরেছে। এছাড়া তৌরণের দু’পাশে জাতির জনক ও প্রধান মন্ত্রীর খোদাই করা ছবিসমুহ নষ্ট হয়ে গেছে। সম্প্রতি আমেনা বেগম তথ্য সংগ্রহকারীকে এসব কথা বলতে গিয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। তিনি দু হাতের তালুতে শুকিয়ে যাওয়া ক্ষত চিহ্ন দেখিয়ে বলেন, ইট কংক্রীট করতে তার দু’হাত থেকে অনেক রক্ত ঝরেছে। তৌরণ নির্মানের জন্য স্থানীয় কোন নেতার কাছ থেকে স্বেচ্ছায় সহযোগিতা না নেয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, নৌকার তৌরণ তৈরি করে জাতির জনক ও তার কণ্যার প্রতি ভালবাসার ভাগি অন্য কাউকে করতে চাননি। তাই কারো কাছ থেকে সহযোগিতা নেননি।
তৌরণটি সংস্কার করার দাবী করেছে ওই গ্রামের বাসিন্দারা।
বাবুখাঁ’র ছেলে শিশু মুক্তিযোদ্ধা ইলিয়াছ খাঁ, মুক্তিযোদ্ধা বাবা’র স্বীকৃতিতে তুষ্ট
**************************
মুক্তিযোদ্ধা বাবুখাঁ’র বড়ছেলে ইলিয়াছ খাঁ, নিজে বাবারমতো স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশ নিয়েছিল। তার বয়স তখন ১২ বছর। পাক বাহিনীর যাতায়ত বিঘ্ন করতে মুক্তি সেনাদের সহযোগি হিসেবে ভাঙ্গা উপজেলার একটি বড় সেতু বারুদ দিয়ে উড়িয়ে দিয়েছিল বালক ইলিয়াছ খাঁ। গুপ্ত আশ্রয়ে থাকা মুক্তি সেনাদের ক্যাম্পে গিয়ে গিয়ে শিশু মুক্তিযোদ্ধা ইলিয়াছ খাঁ শত্রুবাহিনীর গতিবিধি জানাতেন মুক্তি সেনাদেরকে। মুক্তি বাহিনীর সাথে শত্রু বাহিনীর এক ঘাটিতে অপারেশন গ্রুপে ইলিয়াছ খাঁ অংশ নিয়ে পাক হানাদার বাহিনীর এক সদস্যকে ছুরিকাহত করেছিলেন। আজো সেই ছুরিটি স্মৃতি হিসেবে রেখে দিয়েছেন ইলিয়াছ খাঁ ও তার পরিবার।
একই পরিবারের বাপ ছেলে দু’জনই মহান স্বাধীনতা সংগ্রামে অংশ নিয়েছিলেন। সেই পরিবারটির প্রতি সমাজ কতটুকু দায়িত্ববান হতে হবে; সে প্রশ্ন বিবেকের কাছে থেকে গেল। আমেনা বেগম বলেন, ‘আমি আর সাহার্য্য চাইনা, একটিমাত্র ইচ্ছা, প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে দেখা করবো’। প্রধানমন্ত্রীর সাথে দেখা করার জন্য ঢাকা গিয়ে চেষ্টা করেছিলেন; কিন্তু স্থানীয় সাংসদের স্লিপ না নেয়াই দেখা করতে পারেনি।
তিনি এখন চেষ্টায় আছেন স্থানীয় সাংসদ বীর বাহাদুর এমপির সাথে সাক্ষাৎ করে একটি স্লিপ সংগ্রহের জন্য। আমেনা বেগম বলেন, আমার স্বামী ও শিশু সন্তান সেদিন জীবনের মায়াত্যাগ করে মুক্তিযুদ্ধ করেছে। দেশের সকল মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতণা লালনকারীদের কাছেই আহবান রেখে সে বলেন, আমার ছেলে মেয়েদের জন্য মুক্তিযোদ্ধার কোঠায় যোগ্যতা অনুসারে সুযোগ দেয়া হোক।
বর্তমানে তাঁর ছেলে মোখলেছ খাঁ চিকিৎসার অভাবে ধীরে ধীরে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে চলছে। ছেলের চিকিৎসা সহায়তা পাওয়ার আশায় সে সকলের দুয়ারে ছুটে চলছেন। আমাদের প্রত্যেকের উচিৎ এই অসহায় মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের পাশে দাড়ানো। আমরা কি পারিনা রোহিঙ্গাদেরমতো মুক্তিযোদ্ধা সন্তান অসুস্থ্য মোখলেছ খার পাশে দাড়াতে।
***********************************************************************