Check PAGE RANK of Website pages Instantly

Check Page Rank of your Web site pages instantly:

This page rank checking tool is powered by PRChecker.info service

Sunday, October 29, 2017

রংবিহীন ভাবনা:আমার শিশুকাল।

কার্টেসিঃ মোহাম্মদ কামারুজ্জামান, সাংবাদিক, লামা, বান্দরবান।
********************************************************
সময়টা ৭০ দশকের মাঝামাঝি হতে পারে। একদিন স্কুল ফাঁকি দিয়ে বড় খালার বাড়ি যাই। আমার সাথে আরো একজন ছিল। খালার জবাব দিহীতা এড়াতে সাথে থাকা বই খাতা, পেন্সিল-সিলেট তাদের পুকুর পাড়ের একটি বরই গাছের তলায় ছাঁয়ের মধ্যে পূতে রাখি। পাকা বরই (কুল) এর মৌসুম ছিল। দিনমান দুষ্টুমি শেষে বিকালে বাড়ি ফিরে আসি। পেট ব্যথার বাহানা দিয়ে সে সন্ধ্যায় কাচারিতে পড়তে যাইনি। সকালে স্কুলে যাওয়ার সময়ে বই খুঁজে আর পাচ্ছিলাম না। মনে পড়তে দৌড়তে লাগলাম খালার বাড়ির দিকে। ছাঁইয়ের স্তুপ হাতিয়ে বই খোঁজার দৃশ্য বড় খালা দেখেছিল। কিন্তু তা আমি বুঝতে পারিনি; ঘটনাচক্রে তা পরে বুঝেছি। রাতে হয়েছিল প্রচুর বিষ্টি; সূতরাং বইয়ের অবস্থা যা হওয়ার হয়েছে। সেদিন আর খালার বাড়িতে না থেকে তারই পাশে বড় পুপুর বাড়িতে আশ্রয় নিলাম। আর কি পরে মায়ের ধোলাই। মা যখন মারতেন দাদী এসে মারের হাত থেকে রক্ষা করতেন। আমি দাদীর অনেক বেশি আদর পেয়েছিলাম। এইতো মাত্র ক’দিন আগে সে বড় খালার মৃত্যু সংবাদ জেনেছি। হেমায়েত ভাই’র; খালার মেজো ছেলের ঢাকাস্থ রামপুরা সি ব্লকের বাসায় বার্ধক্যজনিত কারণে মারাযায়। আল্লাহপাক আমার খালাম্মাকে জান্নাত নসিব করুন.. আমিন। 
সময়ের ঢানায় ভর করে পার করেছি অনেকটা পথ পরিক্রমা।
জীবনের ৪৭টি বসন্ত খসে গেল। জীবন তরী চলছেতো চলছে, আজো পারিনি গন্তব্যে পৌঁছতে। ছোট বেলার অনেক স্মৃতি মনে পড়ে। পুকুরে সাঁতরানো, কলাগাছের বেলায় ছড়ে দীঘির জলে ভাসা। মায়ের অবাধ্য হয়ে মাঠে-প্রান্তরে ছুটে চলা, বাঘিচায় কিংবা সিমগাছের ঝোপে পাখির ডিম-ছানা খোঁজাসহ অপ্রতিরোধ্য নানান দুষ্টুমিতে মেতে উঠতাম। মায়ের বকুনি অতপর চিকন বেতের আঘাতের পর রাতে ঘুমেরঘোরে মায়ের স্নেহমাখা হাতের পরস। সকালে মক্তবে হজুরের বেত্রাঘাতে দু’হাতের তালু লাল হয়ে যেত। আহ কি মজার সেসব স্মৃতিগুলো আজো থেকে গেছে অমলিন হ্নদয়ে।
**
নোয়াখালী জেলার হাতিয়া উপজেলায় সুখচর ইউনিয়নে; আমাদের বাড়ির নাম ছিল ‘বড় বাড়ি’। বাড়ির দরজায় ছিল একটি কাচারি, একটি মক্তব ও ছোট্ট একটি মসজিদ। বাড়ির মূল প্রবেশদ্বার ছিল পূর্ব-থেকে পশ্চিম মুখি। সাহেবানী বাজার থেকে কয়েক মিটার পশ্চিমে এসে একটি রাস্তা আমাদের বাড়ির উত্ত্র পাশ দিয়ে সোজা পশ্চিমে গিয়ে গৌড়ান বাজারের রাস্তায় মিলিত হয়। উক্ত সড়কের সংযোগ হয়ে গ্রামীন একটি মেটোপথ (রাস্তা) বাড়ির দরজা বেধ করে দক্ষিণে কিছুদূর গিয়ে এঁকেবেঁকে পূর্বদিকে মিজিবাড়ির সামনে দিয়ে একটি এবং পশ্চিম দিকে আরেকটি রাস্তা বয়ে যায়।
**
আমার দাদারা ছিলেন ওই এলাকার প্রভাবশালী। তাঁরা পরস্পর রক্তের আত্মীয়তার সূত্রে অনেক ভাই ছিলেন। এর মধ্যে দাদাদের একজন ‘আজহার উদ্দিন মিয়া’ যার হাক ডাক-প্রভাব, প্রতিপত্তি ঘোটা নোয়াখালী জেলা এবং বরিশালের ভোলা-মনপুরা পর্যন্ত ছিল। আমাদের বাড়ির উত্তরে অবস্থিত বাড়িকে ‘উত্তর বাড়ি’ দক্ষিণে অবস্থিত বাড়িকে ‘দক্ষিণ বাড়ি’ পশ্চিমে অবস্থিত বাড়িকে ‘পশ্চিম বাড়ি’ ও পূর্বে অবস্থিত বাড়িকে ‘পুববাড়ি’ বলা হতো। এছাড়াও দাদা আজহার উদ্দিন মিয়া আমাদের পুরাতন বাড়ি থেকে প্রায় তিন শ্ মিটার পশ্চিম উত্তর কর্ণারে একটি বাড়ি করেন; এর নাম করণ হয় নতুন বাড়ি। তার ৫০ মিটার উত্তরে আরেকটি বাড়ি করে নাম করণ করা হয় ‘চরের বাড়ি’। সেখানকার আঞ্চলিক ভাষায় শব্দগুলো একটু বেঙ্গাত্মক, যেমন; উত্তর বায়, দইন বায় ইত্যাদি।
**
বংশ বুনিয়াদ বেশি হওয়ায় বাড়ির সংখ্যাও ছিল বেশি। বাড়ি তৈরির এসব ঘটনাবলি আমার দাদাদের জম্মেরও আগের বলে ধারণা করা হয়। পুরাতন বাড়িতে বেশ কয়েকটি পুকুর ছিল। এর মধ্যে দরজার পুকুরটিতে পাকা সীঁড়িতে বসে অনেক দুষ্টুমি করতাম আমরা। মাটির পাতিলের ভাঙ্গা টুকরো নিয়ে পুকুরে ছুটতাম। প্রতিযোগিতা দিয়ে মাটির ছোট ছোট চাক ছুটে মারতাম। পানিতে ঢেউ তুলে পাড়ের গাছগুলোর প্রতিচ্ছবিকে বলতাম ‘যক্ষার শিকল’। এসব দুষ্টুমি থেকে বিরত রাখতে কত রুপ কথার ভয় দেখানো গল্প শুনাতেন মা, খালা, পুপুরা। আজব ওইসব গল্প শুনে কঁচি মনে ভয় বেশিক্ষণ কাজ করতোনা। গাছের ফল জামবুরা দিয়ে ফুটবল খেলতাম। পুকুরের পদ্মফুল তোলার সাহস পেতাম না, অপেক্ষায় থাকতাম চাচারা কেউ যদি একটি তুলে দিত খুঁশিতে নাচতাম।
**
আমাদের প্রতিটি বাড়িই ছিল নানান জাতের ফলফলাদির গাছে পরিপূর্ন। নারিকেল সুপারি গাছ ছিল বেশি। বেশ কয়েকটি পয়েন্টে ছিল অনেক খেঁজুর গাছ। প্রচুর রস হতো। এগুলোকে তাবাতে পুড়িয়ে মিঠাই বানিয়ে কলসি ভরে রাখতো। রাতের বেলা চাচারা সবাই নিজেদের গাছ থেকে খেঁজুরের রস ও নারিকেল চুরি করে সিন্নি (পায়েস) তৈরি করতেন। আমরা ছোটরা ক’জন মিলে চাচাদের ভয় দেখিয়ে সিন্নির ভাগ নিতাম।
**
বিকাল হলে মাঠে গিয়ে নানান খেলায় মেতে উঠতাম। ঘুড়ি উড়াতাম, ঢাংগুল খেলতাম, দাড়িবান্দা, হাডুডু, কাপাড়ি, গোল্লাছুট, বৈছি, এক্কা-দুক্কা, কানামাছি, মোরগ লড়াইসহ আরো কত কি। স্কুল বন্ধের সময় বাড়িতে জারি-সারি গানের আসর, নাট্যানুষ্ঠানে সেসময় ছেলেরা মেয়ে সেজে অভিনয় করতো। আমার এক বড় ভাই মেয়ে সেজে বেশ ভালো অভিনয় করতেন, তার নাম আশ্রাফ; সেই ভাইটি এখন কোথায় আছে জানিনা। নেছার কাকা, আশ্রাফ ভাই, ইকবাল কাকা, মিলন কাকা, মহিম কাকা, তানশেন কাকা, শাহনাজ ভাই, হোসেন কাকা, বাশার কাকা, শামিম, নজরুল, রাশেদ, কুদ্দুস ভাইসহ আমরা বড় ছোট সবাই মিলে একসাথে স্কুলের উদ্দেশ্য রওয়ানা হতাম। খেলার মাঠে এক সাথে যেতাম। আমরা ক’জন কনিষ্ট বলে কাকারা ও বড় ভাইয়েরা আমাদেরকে দূরের কোন গাঁয়ে অনুষ্ঠিত মেস খেলায় নিতেন না।
**
ঢাল চর, মৌলভির চর ইত্যাদি চর থেকে বিভিন্ন প্রজাতির হাস, পাখি শিকার করে আনতেন মেজো দাদার গানম্যান আবু নামের একজন। মাটির পাতিল ভরা মহিষের দই, চরে পালন করা ভেড়ার গোস্ত কত খেয়েছি। এসব সোনালী দিনগুলি আর হয়তো আসবেনা। সেসব মানুষগুলোকে এখন আর দেখছিনা; হয়তো দেখবোওনা আর।
**
সিনেমা-টিভি এসব দেখার কোন সুযোগ ছিলনা। জারি-সারি গান আর গ্রমীণ সংস্কৃতির নানান খেলা-ধুলাই ছিল আমাদের বিনোদন। এসব ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতি এখন চোখে পড়েনা। একটি রেডিও ও কলের গান ছিল আমাদের সময়কার প্রযুক্তির উৎকর্ষছোঁয়া। দেশ বিদেশের খবর ছাড়াও রেডিওতে হিন্দি ও উর্দুগান শুনতেন বেশিরভাগ মানুষ।
**
কঁচি তালের আর নারিকেলের পানি ছিল আমার প্রিয়। তাল গাছে বাবুই পাখিদের বাসা ঘরের বারান্দায় ঝুলিয়ে রাখা ছিল আমার সখ। চড়ই পাখির বাসা থেকে ডিম নেয়ার অপরাধে মায়ের অনেক বকুনি শুনেছি। ধান ক্ষেতের কোণে ছোট্ট জলাশয়ে মাছ ধরার ব্যর্থ চেষ্টায় অনেকবার মার খেয়েছি মায়ের হাতে। নিজেদের গাছে কাঠালের মুচি, তেঁতুল, কঁচি আম, আমরুজ, ছোট ছোট পেয়ারা, গাব ইত্যাদি ফল ছেঁড়ার অপরাধেও মায়ের হাতের কম মার খাইনি।
**
আমাদের বাড়ির দক্ষিণে একটি জোয়ার ভাটার খাল ছিল। নানান বাড়িতে যেতে হলে ওই খালটি পার হওয়া লাগতো। আমার নানাজি মাওলানা মোবাশ্বের আহমেদ সাহেবের বাড়িটি দাদার বাড়ি থেকে দূরুত্ব ছিল ডেঙ্গা-ডেঙ্গি; সর্বোচ্চ পাঁচশ্ মিটার। কিন্তু মধ্যখানে একটি খাল এ দূরত্ব বাড়িয়ে তুলেছিল। বাঁশের সাঁকো পার হওয়া আমার জন্য ভয়ংকর এক ব্যাপার ছিল। রাস্তায় একটি ছোট নালা পার হতে না পেরে একদিন সন্ধ্যায় বসে বসে কাঁদছিলাম। কাকতালীয়ভাবে বাবা তখন বাজার থেকে বাড়ি ফিরছিলেন; তার পর বাবা কাঁদে করে নিয়ে আসে।
**
আমি একদিন বরই পাড়তে গিয়ে রাগের মাতায় আমার এক পুপাতো বোনকে মাতা ফাটিয়ে দিয়ে ছিলাম। মায়ের মার খাওয়ার ভয়ে ঘরের মধ্যে চকির তলায় বিকাল থেকে রাত প্রায় ৮টা পর্যন্ত লুকিয়েছিলাম। এর মধ্যে আত্মীয়-স্বজনরা দশ গ্রাম খোঁজতে থাকে। অবশেষে এক মামা আমাকে খাটের নীচ থেকে আবিস্কার করেন। এসব অদ্ভুত দুষ্টমির কথা মনে পড়লে হাসি পায়।
**
আমাদের বড় পুকুর পাড়ে একটি বট গাছ ছিল, সুযোগ পেলে সবাই ওই গাছের ডালা থেকে পুকুরের পানিতে লাফ দিতাম। একদিন পানিতে লাফদিয়ে সবার অজান্তে আমি পানির তলদিয়ে কিছুদূর গিয়ে পাড়ে উঠে চলে আসি। এদিকে অন্য সঙ্গিরা আমাকে সমস্ত পুকুর খোঁজে না পেয়ে হতাশ হয়ে পড়ে। এই দু:সংবাদ আমার মায়ের কাছে দিতে এসে সবাই নির্বাক বিস্ময় প্রকাশ করে ফেরত যায়। কারণ আমি তখন মায়ের কাছে বসে ভুটের ঢাল চিবুচ্ছিলাম।
**
১লা বৈশাখকে বলা হতো বছরের দিন। গ্রামের বিভিন্ন স্থানে হাটখোলায় পরব (মেলা) বসতো। সারা বছর মাটির ব্যাংকে কিংবা রান্না ঘরের বাঁশের খুটি ছিদ্র করে পয়সা জমাতাম। ওই পয়সা নিয়ে দলবেধে সকলে মেলা থেকে বিভিন্ন ধরণের খেলনা, মাটির ঘোড়া, বাঁশের বাশি, তালপাতার পাখা আরো নানান প্রকার খেলনা কিনে বাড়ি ফিরতাম।
**
বছরের শুকনো মৌসুমটি যেন এক অনাবিল আনঁন্দের জোয়ারে ভাসতে থাকতো। বছরের প্রথম দিনে পুকুরের পানিতে ডুবদিয়ে একটি গাছেরগোটা গিলে খেতাম। (আঞ্চলিক ভাষায় বলা হতো কাফিলার গোটা) এটা করা হলে সারা বছর কোন রোগ ব্যাধির ছোঁয়া লাগবেনা না বলে একটি কু-সংস্কার প্রচলন ছিল।
**
বর্ষা নামলে বান-বাতাস আর দুর্যোগের আশংকায় থাকতো সবাই। কারণ হাতিয়া মূলদ্বীপের সাথে বিছিন্ন দ্বীপগুলোর সাথে প্রত্যেক পরিবারের ছিল জীবন ঘনিষ্ট সম্পর্ক। বিচ্ছিন্ন সেসব চরগুলো চাষাবাদ, গরু-মহিশ পালনের উর্বর ক্ষেত্রছিল হাতিয়াবাসীর নিকট। বিশেষ করে সে কারণে বান বন্যায় নানান ক্ষতির আশংকায় থাকতেন সবাই।
**
৭০ দশকের শেষে বাবা আমাদেরকে নিয়ে নৌপথে যাত্রা শুরু করেন পার্বত্য এই জনপদের উদ্দেশ্যে। দু’তিনদিন সাগর নদী পাড়ি দিয়ে অবশেষে মাতামুহুরী নদীর ছোট নৌকায় ছড়ে লামায় এসে পৌঁছি। এর কয়েকমাস পরেই একদিন বিকালে হঠাৎ জ্বরাক্রান্ত হয়ে, রাতেই আমাদের মা দুনিয়া ছেড়ে চলে যায়। বয়সের কারণে মাতৃবিয়োগের মর্ম ব্যাথা তখন বুঝে উঠতে পারিনি।
**
আমাদের একজন মামা আছে (নাজিম উদ্দিন প্রকাশ বাহার) তিনি একটি মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করতেন। জীবনে মাত্র ৪ বার মামাকে দেখেছি। জানিনা এই মূহুর্তে মামা মামী বেঁচে আছে কিনা। মমতাময়ী মামীর হাতের রান্না যে ক’বার খেয়েছি, এখনো মনে পড়ে অতৃপ্ত সাধের কথা। জানিনা জীবদ্দশায় আরকি কখনো মামা-মামীর সাথে দেখা হবে কিনা।
**
এখনো মনে পড়ে আমার জম্মগ্রাম সবুজ ছায়া ঘেরা সুখচর ইউনিয়নের সে স্থানটির কথা। গ্রামের মেটোপথ বেয়ে গরুর গাড়িতে ছড়ে বিভিন্ন আইটেমের পিটা নিয়ে আত্মীয়দের বাড়িতে বেড়াতে যাওয়ার সেসব স্মৃতি হ্নদয়ে দোলা খাচ্ছে। চাঁদনী রাতে বাড়ির উঠানে বসে সবাই রহিমা-মহিমার কবিতা, গাজী কালুর পুতি পাঠ, হযরত বেলালের জারি গান ইত্যাদি বিনোদন মূলক অনুষ্ঠানের মধ্যদিয়ে অনেক প্রেরণা পেতাম আমরা ছোটরা। বড়দের মূখে সিনেমা-নাটকের গল্প শুনতে ভালো লাগতো।
**
মাসে দু’একবার বাড়ির পশ্চিম দিকে নদী (১৮ নং বেড়ির পয়েন্ট) দেখার জন্য কয়েকজন মিলে যেতাম। নদী পারের বাসিন্দা; যারা মাছ ধরতো, তাদের ব্যতিক্রম জীবনযাত্রা প্রনালী দেখতাম।নদী পারের বটগাছ, কেউড়া বাগান, মাঝ নদীতে ভেসে চলা পালতোলা নৌকা; এসব কিছু মনে হতো যেন পটে আঁকা ছবি। এসব দৃশ্য দেখে ‘আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি’ জাতীয় সঙ্গিতের কয়েকটি পঙ্গক্তি মনে পড়তো। কার্তিক-অগ্রায়হন মাসে ধান ক্ষেতের সোনালী দোলা এখন আর নজর কাটেনা।
**
আমার সেই জম্মগ্রাম এখন আর নেই। বহু আগে সর্বনাশা মেঘনা গ্রাস করে নিয়েছে। কিন্তু আমার ভেতরের নদীতে আজো ভাসছে সেই সবুজ ছায়াবিথি গ্রাম, মেটোপথ, হাট-বাজার, স্কুল, মক্তব, সবুজ-সোনালী ধান ক্ষেত, আখ ক্ষেত, রাস্তার পাশের জোড়া তালগাছ, ঝুলন্ত বাবুই পাখির বাসা, অসংখ্য শালিক, চিলের মুরগির বাচ্ছা শিকার, শকুনের মরা গরু খাওয়া, ডানা মেলে উড়ন্ত রাজহাঁস, সাদা বক, ঘুঘু, পুকুরে বড় বড় মাছের লাফালাফি, ঘরের টিনে বাকবাকুম কবুতরের শব্দ, রাতের বেলায় পেঁছা আর মাউয়ালের (এক প্রকার ভীতিকর প্রানী) ডাক, লাঠি খেলা, গরুর লড়াই, প্রকৃতির আকাশে রঙধনুর সাত রং, বিয়ে সাধির অনুষ্ঠানগুলোতে নানান আনঁন্দ-উল্লাসের সেসব দৃশ্য এখন আর নজরে পড়েনা।
**
চারদিকে যেন এক কঠোর আত্মকেন্দ্রিকতার সুর বাজছে। যেন কৃত্রিম রঙে প্রকৃতি তার আসল রুপ হারিয়ে ফেলেছে।