‘ডিপ্রেশন’ শব্দটির সাথে বর্তমান যুগে পরিচয় থাকাটা খুবই স্বাভাবিক। তরুণ প্রজন্মের মধ্যে বহুল প্রচলিত একটি শব্দ- ‘ডিপ্রেশন’। কিছু বুঝে কিংবা না বুঝেই এই শব্দটি ব্যবহারের উদাহরণও কম নয়! ছোটখাটো মন খারাপকেও “আমি ডিপ্রেশনে আছি” বলে চালিয়ে দেয়াটা এখন হরহামেশাই ঘটে হয়তো আপনার বন্ধুমহলেও! ডিপ্রেশন মানে কি শুধুই মন খারাপ? নাকি তার চেয়েও অনেক বড় কিছু বোঝায় এই শব্দটি দ্বারা? মানবমনের একটি জটিল স্তরে গিয়ে মানুষ এই ডিপ্রেশনের শিকার হয়। রিডার্স ডাইজেস্ট অনুযায়ী, কেউ ডিপ্রেশনে ভুগছে কিনা তা জানার রয়েছে আটটি লক্ষণ। আজ সেই লক্ষণগুলো নিয়েই কথা বলবো। দেখে নেয়া যাক আসলেই কারা ডিপ্রেশনে ভুগছেন এবং কাদের মধ্যে দেখা যাচ্ছে এই লক্ষণগুলো?
১. অনুভূতিগুলো বেশিরভাগ লুকিয়ে রাখা:
অন্য কারো সাথে, প্রিয়জনদের সাথে, এমনকি কখনো কখনো নিজেদের সাথেও তারা তাদের সমস্যাগুলো নিয়ে কথা বলতে চায় না, সেগুলো লুকিয়েই রাখে। সমস্যাগুলো নিয়ে কথা বলতে তাদের ভালো লাগে না, তাই কখনো কারো সাথে ভাগ করে নিলে সেটি আরো স্পষ্টতা পাবে, এ ভয়ে সেগুলোকে সামনেই আসতে দেয় না। কিন্তু তাতে কি সমস্যা চলে যায়? চেপে রাখার কারণে তা আরো বাড়ে। কিন্তু সমস্যা নিয়ে ভাবাটাও তারা ভয় পায়। যতদিন পারা যায় পালিয়ে বেড়ায় এবং সমস্যাগুলোকে এর চূড়ান্ত পর্যায় পর্যন্ত বাড়তে দেয়। কোনো মন খারাপ বা কষ্টের অনুভূতিকে প্রকাশ করে না, কারণ তারা ভয় পান যে তা বেরিয়ে এলে কোনোভাবেই নিজেকে সামলাতে পারবে না, অনুভূতিগুলোকে তাই দমিয়েই রাখা হয়। কিন্তু একদিন সেগুলো একসাথে বিস্ফোরিত হবে, তখন? ডিপ্রেশনে ভোগা মানুষেরা অনুভূতির সকল দরজা-জানালা বন্ধ করে রাখে, ভ্যাপসা পরিবেশে একসময় নিজেরই গুমোট লাগে।
২. ভালো বা খারাপ- কোনোটাই না থাকা:
সাদা-কালোর মাঝখানে থাকা এক ধূসর এলাকায় আটকা পড়ে থাকে তাদের মন, বর্তমান সামগ্রিক পরিস্থিতি এবং তারা নিজে। তারা কখনো সত্যি করে বলেন না যে, তারা ভালো আছে না খারাপ! হয়তো নিজেরাই খুঁজে পায় না সেই ভালো থাকা না থাকার উত্তরটি। কেউ যখন জিজ্ঞেস করে, “কেমন আছেন?”, তখন সেই প্রশ্নটির উত্তর দিতে গিয়ে যেন ভাবনায় পড়ে যায় অথবা প্রতিদিন একটি মেকি প্রত্যুত্তর থাকে, “ভালো আছি” বা “আমি তো সবসময় ভালোই থাকি”। এটা যেন প্রশ্নকারীকে খানিকটা এড়িয়ে যাবার জন্যই জোর করে বলা।
৩. ইচ্ছে করেই প্রচন্ড ব্যস্ত একটি জীবন বেছে নেয়া:
দমিয়ে রাখা অনুভূতিগুলোর সাথে এঁটে উঠতে না পারার কারণে তারা বেছে নেয় নিজেদের প্রচন্ড ব্যস্ত রাখার পথটি, যাতে নিজের জন্য নিজেরই সময় না মেলে, অনুভূতিগুলো অতল গহ্বরে যাতে আরো চাপা পড়ে যায়। পড়াশোনা, চাকরি, অতিরিক্ত কাজের চাপ- সব মিলিয়ে তারা ধীরে ধীরে নিজেদের ডুবিয়ে দেয় একধরনের স্বেচ্ছাক্লান্তিতে। একটুও অবসর সময় রাখে না, দমবন্ধ একটি জীবন, তবু প্রাণ খুলে শ্বাস নিতে চায় না তারা! নিজের কাছ থেকে নিজেই কি পালায়? একটু বিনোদন, প্রিয়জনের সঙ্গ কিংবা একলা বসে ভাবা- কিছুই চায় না, নাকি পারে না? ডিপ্রেশন তাদেরকে তা করতে দিচ্ছে না। অতঃপর ধীরে ধীরে তলিয়ে যাওয়া হয় অতি পরিশ্রমে।
৪. অল্পতেই রেগে যাওয়া:
কারো অল্প হাসি বা আনন্দের প্রকাশেও যেন বিরক্ত লাগে তাদের। কেউ ভালো কথা বললেও আর ভালো লাগে না। একটু পরপর রাগ হয়। সুখ-দুঃখের অনুভূতিকে চাপা দিয়ে তাদের সকল আবেগের বিকল্প হিসেবে তখন দেখা দেয় রাগ। অল্পতেই, হয়তো অকারণেই রেগে যায় আশেপাশের সবার ওপর। দূরত্ব সৃষ্টি হয় তাদের সাথে। তাৎক্ষণিক রাগের বহিঃপ্রকাশটা বেশ প্রবল হয়। কাউকে আঘাত করা বা জিনিসপত্র ভাংচুর পর্যন্তও গড়ায়। আগে যদি এই স্বভাব না থেকেও থাকে, তবুও ডিপ্রেশনের সময় এমনটা হতে পারে। ব্যক্তির নিজের উপরও রাগ হয়, এলোমেলো কারণ দর্শায়, নিজেই বুঝতে পারে না কী এই রাগের উৎস? উত্তর- ডিপ্রেশন।
৫. অহেতুক ঝুঁকিপূর্ণ আচরণ করা:
ডিপ্রেশনে আক্রান্তদের, বিশেষত পুরুষদের মধ্যে কোনো কারণ ছাড়াই ঝুঁকি নেবার প্রবণতা বেড়ে যায়। খুব জোরে গাড়ি চালানো, পথ চলতে অন্যমনস্কতা, অতিরিক্ত ধূমপান কিংবা মদ্যপান, জুয়া খেলা, নিজেকে বা অন্যকে আঘাত করা ইত্যাদি ঝুঁকিপূর্ণ আচরণ দেখা দেয়। “যা ঘটে ঘটুক”- এ ধরনের একটা আচরণ দেখা দেয় ডিপ্রেশনে ভোগা মানুষের মধ্যে। দৈনন্দিন জীবনে প্রয়োজনীয় অনেক কিছুই তারা এড়িয়ে যায়, সামাজিক সম্পর্কে অবনতি দেখা দেয়, নিঃসঙ্গতা পেয়ে বসে। তারা নিজের অজান্তেই এমন ঝুঁকিপূর্ণ কাজের মধ্যে ডুবে যায় এবং নিজের জীবনের অনেক ক্ষতি করে ফেলে।
৬. চিন্তা-ভাবনায় অস্পষ্টতা:
সব সমস্যাকে চেপে রাখার ফলে মস্তিষ্কের অবস্থা এমন হয় যে ভালো করে কিছু চিন্তা করতেই পারে না। কোনো একটি বিষয়ে ফোকাস করে তা নিয়ে ভাবা এবং পর্যায়ক্রমে সমাধান করাও হয়ে ওঠে দুঃসাধ্য একটি ব্যাপার। ভাবনায় খেই হারিয়ে ফেলা, অবিন্যস্ত কথোপকথন, কথায় যুক্তি কিংবা আবেগ দুটোরই প্রবল অভাব, কথা বলা কমে যাওয়া, কথা খুঁজে না পাওয়া ইত্যাদি ডিপ্রেশনের লক্ষণ। চিন্তা-ভাবনা ও তা প্রকাশের মাধ্যমেই একটি সফল যোগাযোগ স্থাপিত হয়। কিন্তু যখন ভাবনার গতি খুব ধীর হয়ে যায়, তখন সেভাবে কথাও আসে না আর যোগাযোগেও দেখা দেয় অস্পষ্টতা। এ সময় মানুষ প্রচন্ড সিদ্ধান্তহীনতায় ভোগে। কী খাবে, কোথায় যাবে, কী কিনবে এসব সিদ্ধান্ত নেয়াও বেশ কঠিন কাজ বলে মনে হয়, অন্যান্য সমস্যার কথা ভাবা তো দূরের কথা!
৭. নিজের পছন্দের কাজগুলো আর না করা:
নিজের সৃজনশীলতার সাথে সম্পর্কিত কোনো কাজ, যেমন ছবি আঁকা, ছবি তোলা, গান গাওয়া, লেখালেখি, নাচ করা ইত্যাদি সব ধীরে ধীরে কমিয়ে দেয়া এবং একসময় আর না করা ডিপ্রেশনের একটি মারাত্মক লক্ষণ। যে কাজগুলো একজন শুধু করার জন্য করে না, বরং আত্মতৃপ্তির জন্য করে, তা নিজেকে পথচলার শক্তি যোগায়। কিন্তু ডিপ্রেশনে ভোগা মানুষগুলো সেই কাজগুলো করাই একসময় থামিয়ে দেয় এবং নিজেদের মধ্যে সেগুলো করার কোনো তাগিদ অনুভব করে না বলে জানায়। আশেপাশের মানুষজন অবাক হয়, হয়তো সে নিজেও অবাক হয়। কিন্তু তবু কোথায় কেমন যেন ছন্দপতন ঘটে যায়!
৮. অন্তর্মুখী ও এককেন্দ্রিক হয়ে পড়া:
ডিপ্রেশনে ভোগা মানুষটির জীবনে ধীরে ধীরে অন্যের জায়গা কমে যেতে শুরু করে এবং সবটুকু জুড়ে শুধু সে-ই থাকে। অন্যের ভালোলাগা, মন্দলাগা বা কোনো অনুভূতি তার কাছে তেমন কোনো দাম পায় না। একসময় নিজেও ব্যাপারটা বুঝতে পারে এবং এজন্য নিজেকে দোষী ভাবে। কিন্তু তারপরও নিজস্ব সেই গন্ডি থেকে বের হতে পারে না। পরিবার, বন্ধু-বান্ধব, প্রেমিক-প্রেমিকা সহ সব ধরনের ব্যক্তিগত ও সামাজিক সম্পর্কে অবহেলা, কারো মতামতকে প্রাধান্য না দেয়া, নার্সিসাস কমপ্লেক্সের সূত্রপাত ইত্যাদি লক্ষণ দেখা যায়। এর ফলে সকলেই ব্যক্তিটির কাছ থেকে দূরে সরে যেতে শুরু করে এবং সে পুরোপুরি একা হয়ে পড়ে। একাকিত্ব যত গ্রাস করে, ডিপ্রেশন আরো বাড়তে থাকে। একধরনের চক্রাকার প্রক্রিয়ায় ডিপ্রেশন গিলে খায় ব্যক্তিটিকে এবং তার জগতটাও ক্রমশ ছোট হয়ে আসে।
কার্টেসিঃ ফিচার ইমেজ- annabelle.ch/
The Green city surrounded by natural beauty and cool green. LAMA is ethnically Rich in unlimited natural resources. There are numerous small spiral wavy hills and mountains, flowing rivers glide. The combination of beautiful scenery, rich and varied cultural inheritance Lama, just as the artist's paintings on canvas. In this region, each of events is general activity, education, development, socioeconomic and political issues and also daily news and views are published on news channel.
Check PAGE RANK of Website pages Instantly
Check Page Rank of your Web site pages instantly: |
This page rank checking tool is powered by PRChecker.info service |