Check PAGE RANK of Website pages Instantly

Check Page Rank of your Web site pages instantly:

This page rank checking tool is powered by PRChecker.info service

Friday, July 7, 2017

লামা শহর ও সম্পদ রক্ষায় মাতামুহুরীর ভাঙ্গন-বন্যা নিয়ন্ত্রণে নদীর গতিপথ পরিবর্তন জরুরী।।।

কোটি কোটি টাকার সম্পদ বিলীন, আরো শত কোটি টাকার স্থাপনা ভাঙ্গনের কবলে, দাবী আদায়ে রাজপথে নামবে স্থানীয়রা
লামা শহর ও সম্পদ রক্ষায় মাতামুহুরীর ভাঙ্গন-বন্যা নিয়ন্ত্রণে নদীর গতি পরিবর্তন জরুরী
=============================
কার্টেসিঃ মোহাম্মদ কামারুজ্জামান, সাংবাদিক, লামা, বান্দরবান পার্বত্য জেলা।
প্রতি বছর বর্ষা  মৌসমে খরস্রোতা মাতামুহুরীর করাল গ্রাসে দু’কুলের অধিবাসিদের সর্বশান্ত করে দেয়। ভাঙ্গনের পাশপাশি পাহাড়ী ঢলে নিমজ্জিত করে দেয় লামা শহরসহ বিস্তীর্ণ এলাকা। ক্ষয় ক্ষতির পরিমান দাড়ায় কোটি টাকারও বেশী। গত বিশ বছরে অসংখ্য বাড়ী ঘর, সরকারি বেসরকারি স্থাপনা রাস্তাঘাট, ব্রীজ, কালভাটর্, স্কুল, মাদ্রাসা, মসজিদ, ক্যায়াং ও লামা পৌর এলাকার ব্যাপক এলাকাসহ পার্শ্ববর্তী চকরিয়াধীন বমুবিলছড়ির বিস্তৃীর্ণ এলাকা বিলীন হয়ে যায় নদীগর্ভে। প্রায় অর্ধ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এলজিইডি’র একটি ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। হাল নাগাদ রুপসিপাড়া সড়কের অংহ্লাড়িপাড়া পয়েন্টে এলজিইডির সদ্য নির্মিত কোটি টাকা ব্যয়ে ১টি গার্ডার ব্রীজসহ বহু গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ভাঙ্গনের কবলে রয়েছে। শত কোটি টাকার স্থাপনা ভাঙ্গনের মুখে। এর সাথে পাল্লা দিয়ে প্রতি বছর পাহাড়ী ঢলে সৃষ্ট বন্যায় লামা পৌর এলাকাসহ রুপুসিপাড়া, লামা ইউনিয়ন ও পার্শ্ববর্তী বমুবিলছড়ি ইউনিয়নের নিম্মাঞ্চল প্লাবিত হয়ে কৃষি ফসলসহ সম্পদের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। নদী ভাঙ্গন ও বন্যার কবল থেকে রক্ষাকল্পে প্রয়োজন নদীর গতি পরিবর্তন। সাপমারা ঝিরি নামক স্থানে একটি পাহাড়ের ২মিটার অংশ কেটে নদীর গতিপথ সোজা করে দেয়ার দাবী রাজপথে উচ্চারিত হওয়া এখন সময়ের ব্যাপার। লামাবাসীর দীর্ঘদিনের এ দাবী পূরণে সরকারের মন্ত্রী এমপিরা একাধিকবার কথা দিয়েও রাখছেন বলে এলাবাসীর ক্ষোভ।

নানানভাবে পরিবেশ দূষনের ফলে মাতামুহুরী নদীর নাব্যতা হারিয়ে যায়। এর ফলে বর্ষাকালে দু’তীরের অধিবাসিদেরকে তলিয়ে দেয়াসহ গ্রাস করে নিচ্ছে ভুসম্পদ ও স্থাপনা সমুহ। প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে লামা পৌরশহর, উপজেলা পরিষদ, বমুবিলছড়ি ইউনিয়নের একাংশ, লামা ও রুপসিপাড়া ইউনিয়নসহ পার্শ্ববর্তী আলীকদমের চৈক্ষ্যং ইউপির একাংশ তলিয়ে যায়। জানমালের ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়।
২০১৬ সালে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী লামা পৌরসভায় ত্রান বিতরণ অনুষ্ঠানে এক জনসভায় পৌর মেয়রের দাবীর প্রেক্ষিতে লামাকে বন্যামুক্ত ও ভাঙ্গনরোধে স্থায়ী ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দিয়েছিলেন। এর আগে ১৯৯৭ সালে বর্তমান প্রধান মন্ত্রী বান্দরবান সফরে আসলে মাতামুহুরী নদীর ভাঙ্গন রোধে কাজ করার জন্য ৬ কোটি টাকার বরাদ্ধ ঘোষণা করেছিলেন।
এছাড়া বর্তমান লামা উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি মোহাম্মদ ইসমাইল লামা পৌর মেয়র থাকাকালে ১৯ নভেম্বর-২০০২ সালে লামা পৌর সভার স্বারক নং- লামা/পৌর/২০০২/৩৭০ মূলে বিস্তারিত বিষয় উল্লেখ করে  বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড এর বরাবর অগ্রাধিকার ভিত্তিতে লামা পৌর শহর রক্ষা বাঁধ নির্মানের জন্য পানি সম্পদ মন্ত্রীর নিকট একটি আবেদন জানানো হয়। একই সময় জেলার দায়িত্ব প্রাপ্ত তৎকালীন সরকারের মন্ত্রী তার পত্র নং- পবম/প্রতিমন্ত্রী/ডি.ও(৪)২০০২/২৭৭ তারিখ ২১ নভেম্বর ২০০২ ইং মূলে একই ভাবে বাঁধ নির্মানের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যাবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট বিভাগকে নির্দেশ দিতে পানি সম্পদ মন্ত্রীকে অনুরোধ করেন। এ প্রেক্ষিতে পানি উন্নয়ন বোর্ড লামা শহরকে নদী ভাঙ্গনও বন্যার কবল থেকে রক্ষার জন্য প্রায় সাড়ে ৩ কোটি টাকা ব্যয়ে আরো একটি প্রকল্পের প্রাক্কলন করলেও এর কোনটি বাস্তবায়িত হয়নি। এছাড়া নদী সংরক্ষন প্রকল্পের আওতায় প্রয়োজনীয় ব্যাবস্থা গ্রহনের  জন্য সরকারের নিকট দাবী জানিয়েছিল স্থানীয়রা। এ দাবীটি গনদাবীতে রুপ নিলেও তৎসময়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়’র লাল ফিতায় আটকা পড়ে ফাইলটি।

দেশের বিভিন্ন জেলায় বন্যা নিয়ন্ত্রণে পানি উন্নয়ন বোর্ড কাজ করছে। বান্দরবান পানি উন্নয়ন বোর্ডের করিৎকর্মা কর্মকর্তা কর্মচারীরা জেলা শহরে বসে শুধু সরকারের মন্ত্রীদেরকে পটকল দিয়ে চাকুরী যায়েজ করে যাচ্ছে বলে স্থানীয়দের দাবী।
লামা পৌরসভার মেয়র জহিরুল ইসলামা জানান, মাতামুহুরী নদীর গতি পরিবর্তন করে সমস্যার স্থায়ী সমাধা ও পৌরশহরকে একটি আধুনিক আকর্ষণীয় শহর হিসেবে গড়ে তুলতে পার্বত্য বিষয়ক প্রতিমন্ত্রীর প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে। জলবায়ু প্রকল্পের আওতায় একটি বরাদ্দ প্রাপ্তির সম্ভাবনার কথা জানায় মেয়র। এদিকে লামা উপজেলা বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের পক্ষ থেকে নদীর গতি পরিবর্তন করে বন্যা নিয়ন্ত্রনের মাধ্যমে লামা শহর রক্ষার দাবীতে যে কোন সময় রাজ পথে আন্দোলন হতে পারে, এমন আভাস পাওয়া যাচ্ছে।

মাতামুহুরীর নদীর অবস্থান :
লামা পৌরসভা ও চকরিয়া উপজেলাধীন বমুবিলছড়ি ইউনিয়নের একাংশের তিন দিকে ঘীরে একেঁবেঁকে নদীটি লামা পৌর শহরের পশ্চিম পাশ ঘেঁষে দুখিয়াসুখিয়া পাহাড় ভেদ করে উত্তর দিকে বাঁক নিয়ে পশ্চিম মূখি প্রবাহমান। বমুবিলছড়ি ইউনিয়নের মাইজপাড়ার পূর্বপ্রান্ত থেকে সোজা ১ কিলোমিটার পশ্চিমপাড়া ও লামা পৌরসভার ১ নং ওয়ার্ড টিটি এন্ড ডিসি সাপমারা ঝিরি পাহাড়ের কোল ঘেঁষে বমু সংযোগ খালে চলে আসে। সেখান থেকে ১৮০ ডিগ্রি বাঁক নিয়ে বিলছড়ি পশ্চিমপাড়া-চাম্পাতলীকে বিভক্ত করে ও লামা পৌরশহরের পশ্চিমপাশ ঘেঁষে সোজা আরো প্রায় দেড় কিলো মিটার দক্ষিনে আসে। সেখান থেকে একই এঙ্গেলে দুখিয়া-সুখিয়া পাহাড় ভেদ করে পশ্চিম-উত্তর মূখে ইংরেজি “ভি” আকৃতিতে বাঁক নিয়ে সাপমারা ঝিরি পাহাড়ের পূর্বদিকের কোল ঘেঁষে পশ্চিম মূখে পতিত হয়। বমু সংযোগ খাল ঘেঁষে সাপমারাঝিরি পাহাড়টি মাতামুহুরী নদীকে দু’ঢালুতে রেখে অবস্থান করছে। বমুখাল ও মাতামুহুরীর সংযোগস্থল-এর কিছু দক্ষিনে বাঁধ নির্মাণ করে, টিটি এন্ড ডিসি’র পাশ দিয়ে দু’শ মিটার খনন ও সাপমারাঝিরি পাহাড়ের অংশ আরো প্রায় দু’শ মিটার কেটে দিয়ে নদীর গতিপথ সোজা করে দেয়া সম্ভব। এভাবে নদীর গতি পরিবর্তন করা হলে অব্যাহত ভাঙ্গন ও বর্ষা মৌসুমে জলাবদ্ধতা থেকে রক্ষা পাবে লামা পৌর শহরসহ পাশ্ববর্তী বমুবিলছড়ি, লামা, রুপসিপাড়া ও আলীকদমস্থ চৈক্ষ্যং ইউনিয়নের  একাংশ। ফলে স্থানীয়রা প্রায়ই বছর কোটি কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি থেকে রক্ষা পাবে। সে সাথে বন্যা ও নদী ভাঙ্গনরোধে স্থায়ী ব্যবস্থা নিশ্চিত হবে।

অপর দিকে টিটি এন্ড ডিসি থেকে দক্ষিণ ও পশ্চিম উত্তর দিকের প্রায় দু’ আড়াই কিলোমিটার মাতামুহুরী নদীর অংশ বিশেষ হয়ে উঠবে এক বিশাল কৃত্রিম লেক (জলাশয়)। সম্ভাব্য লেকে মৎস্য চাষাবাদ করে আর্থিক লাভবান হওয়ার পাশাপাশি একেবারে শহর ঘেঁষে পর্যটক শিল্পের নতুন দ্বারোম্মচিত হবে।

অপর দিকে গত তিন দশকে তামাক চাষ, বৃক্ষ নিঁধন, পাহাড় কাটা, পাথর আহরণসহ পরিবেশ বিদ্ধেষী কর্মকান্ডের ফলে নদীর নাব্যতা অস্বাবাভিক ভাবে হ্রাস পেয়েছে। ফলে কয়েক ঘন্টা টানা মূসলধারে বৃষ্টি হলে পৌর এলাকাসহ বমুবিলছড়ি ইউনিয়নের একাংশসহ, উপজেলা প্রশাসন ও  বাণিজ্যিক এলাকা ৫/১০ ফুট পানির নীচে তলিয়ে যায়। এসময় প্রায় ৩০ হাজার মানুষ পানি বন্দি হয়ে পড়ার পাশা-পাশি ২হাজার একর ক্ষেতের ফসল জলমগ্নতার কারণে পলিচাপা পড়ে নষ্ট হয়ে যায়।

লামাকে নদী ভাঙ্গনের কবল থেকে রক্ষা ও বন্যামুক্ত করতে সাপমারাঝিরি পাহাড় কেটে মাতামুহুরী নদীর গতি পরিবর্তনের দাবীটি বর্তমানে স্থানীয়দের প্রাণের দাবীতে রুপ নিয়েছে। এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় প্রদক্ষেপ গ্রহনের জন্য এলাকার সকল পেশা ও শ্রেনীর মানুষ পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুর এমপি’র মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।