Check PAGE RANK of Website pages Instantly

Check Page Rank of your Web site pages instantly:

This page rank checking tool is powered by PRChecker.info service

Thursday, August 2, 2018

লামায় উন্নয়ন প্রকল্প পরিদর্শনে পার্বত্য মন্ত্রণালয় সচিব নুরুল আমিন


মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম-০২ আগষ্ট’ ২০১৮ইং।
বান্দরবানের লামা উপজেলায় পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড, বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদ ও সরকারী বিভিন্ন দপ্তরের অর্থায়নে বাস্তবায়িত নানা উন্নয়ন প্রকল্প পরিদর্শনে আসেন পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব মো. নুরুল আমিন। বৃহস্পতিবার (২ আগষ্ট) বৃষ্টিকে উপেক্ষা করে দিন ব্যাপী তিনি কয়েকটি উন্নয়ন প্রকল্প পরিদর্শন করেন তিনি। দুপুরে লামা উপজেলা পরিষদ হলরুমে বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা, হেডম্যান, জনপ্রতিনিধি, সুধীজন ও সাংবাদিকদের সাথে এক মতবিনিময় সভায় মিলিত হন।

এসময় পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিবের সফর সঙ্গী ছিলেন, বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ নুরুল আবচার, বান্দরবানের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মো. হারুণ অর রশিদ, লামা উপজেলা চেয়ারম্যান থোয়াইনু অং চৌধুরী, পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের প্রকল্প পরিচালক আব্দুল আজিজ, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নূর-এ জান্নাত রুমি, লামা থানা অফিসার ইনচার্জ অপ্পেলা রাজু নাহা সহ প্রমূখ।
মতবিনিময় সভায় পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব মো. নুরুল আমিন বলেন, পাহাড়ি সন্ত্রাসীদের সকল কার্যক্রমে লাগাম দিতে হবে। অন্যথায় উন্নয়ন কাজে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হতে পারে। পার্বত্য অন্য দুই জেলা হতে বান্দরবানের আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভাল বলে তিনি সন্তোষ প্রকাশ করেন। উন্নয়ন হচ্ছে তবে কাজ বাস্তবায়নে দুর্নীতি ও অনিয়মের মাত্রা আরো কমাতে পরামর্শ দেন। তিনি উন্নয়নের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয়তা ও জনগুরুত্বকে অগ্রাধিকার দিতে বলেন। প্রত্যেকটি জনপদে যেন উন্নয়ন সমবন্টন হয় সেদিকে দায়িত্বরত ব্যক্তিদের দৃষ্টি রাখতে বলেন। বাল্য বিবাহ, মাদক নির্মূল, শিক্ষা খাত উন্নয়ন, কমিউনিটি ক্লিনিক, মা ও শিশুদের স্বাস্থ্য সেবা, লামার বন্যা নিরসনে মাতামুহুরী নদীর গতিপদ পরিবর্তন, মাতামুহুরী নদীর ভাঙ্গন রোধ, আশ্রয়ণ প্রকল্পের উন্নয়ন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভূমি সমস্যা সমাধান, যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন নিয়ে তিনি আলোচনা করেন।
মতবিনিময় সভা শেষে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. নুরুল আমিন, উন্নয়ন বোর্ডের অর্থায়নে লামা মাতামুহুরী ডিগ্রী কলেজের ১৮ লক্ষ টাকা ব্যয়ে নির্মিত বাউন্ডারী ওয়াল, ৩৫ লক্ষ টাকা ব্যয়ে ছাত্রী নিবাস, ১৫ লক্ষ টাকা ব্যয়ে শহীদ মিনার, ৫০ লক্ষ টাকা ব্যয়ে কনফারেন্স হল, সাড়ে ৮ কোটি টাকা ব্যয়ে মাতামুহুরী ব্রিজের উপর নির্মাণাধীন ১৭০ মিটার পিসি গার্ডার ব্রিজ, ২ কোটি ব্যয়ে লামা পৌর বাস টাার্মিনাল, ৩ কোটি ৬৫ লক্ষ টাকা ব্যয়ে রুপসীপাড়া বাজারস্থ ব্রিজ, ৩৫ লক্ষ টাকা ব্যয়ে রুপসীপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্রাবাস, ২০ লক্ষ টাকা ব্যয়ে রুপসীপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের দ্বিতল ভবনের সম্প্রসারণ, ১৫ লক্ষ ব্যয়ে বাজার মসজিদের উন্নয়ন, ১৫ লক্ষ টাকা ব্যয়ে বঙ্গবন্ধুৃ পাঠাগার, ১৫ লক্ষ টাকা ব্যয়ে আনসার ভিডিপি ক্লাব, ১৫ লক্ষ টাকা ব্যয়ে মুসলিম পাড়া যুব ক্লাবের উন্নয়ন কাজ পরিদর্শন করেন।
দিন শেষে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব লামা উপজেলার লাইনঝিরিস্থ বিএটিবি রেষ্ট হাউজে রাত্রি যাপন করেন এবং শুক্রবার (০৩ আগষ্ট) পার্শ্ববর্তী আলীকদম উপজেলায় বিভিন্ন উন্নয়ন কাজ পরিদর্শন করবেন বলে জানা যায়। তিনি সেখানে বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা, হেডম্যান, জনপ্রতিনিধি, সুধীজন ও সাংবাদিকদের সাথে এক মতবিনিময় সভা করার কথা রয়েছে।

তথ্যসূত্র: লেখকের ফেসবুক পেজ, সাংবাদিক, লামা, বান্দরবান পার্বত্য জেলা।

লামার গজালিয়ায় একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পের উঠান বৈঠক অনুষ্ঠিত


।। মংছিংপ্রু, লামা, বান্দরবান পার্বত্য জেলা।। ২০১৮-০8-01।

শেখ হাসিনার উপহার একটি বাড়ি একটি খামার, বদলাবে দিন তোমার আমার এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে লামা উপজেলায় গজালিয়া ইউনিয়নের একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পের ‘ক্যাংগহখ্যাং পাড়া গ্রাম উন্নয়ন সমিতি’র’ উদ্যোগে উঠান বৈঠন অনুষ্ঠিত হয়েছে। ০১ আগষ্ট বুধবার বিকালে গজালিয়া ইউনিয়নস্থ গাইন্ধ্যা পাড়ায় ক্যাংগহখ্যাং সমিতির অফিসে এ উঠান বৈঠক হয়।

 একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্প মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্নপ্রসূত একটি অগ্রাধিকার মূলক প্রকল্প এবং ১০টি উদ্যোগের মধ্যে এটিই প্রথম নম্বর উদ্যোগ। নিজস্ব পুঁজি ব্যবস্থাপনায় প্রান্তিক পর্যায়ে স্থানীয় প্রাকৃতিক ও মানব সম্পদের সর্বোত্তম ব্যবহারের মাধ্যমে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জীবিকায়ন নিশ্চিত করে দারিদ্র্য নিরসন ও টেকসই উন্নয়ন করার হল এ প্রকল্পের মূল লক্ষ্য।  এ প্রকল্পের আওতায় লামা উপজেলায় মোট ৬৪টি গ্রাম উন্নয়ন সমিতির গঠন করা হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট অফিস সূত্রে জানা গেছে।

অনুষ্ঠিত ক্যাংগহখ্যাং পাড়া গ্রাম উন্নয়ন সমিতি’র সভাপতি উশৈঞ্য মার্মা সভাপতিত্বে উঠান বৈঠকে  প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন লামা উপজেলা নির্বাহী অফিসার নূর-এ-জান্নাত রুমি। বিশেষ অতিথি ছিলেন, গজালিয়া ইউপি চেয়ারম্যান বাথোয়াইচিং মার্মা, একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পের উপজেলা সমন্বয়ক উবাঞেই রাখাইন, উপজেলা পল্লী উন্নয়ন কর্মকর্তা গোপাল কৃষ্ণ চক্রবর্তী।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি বলেন, একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্প মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ১০টি ব্রান্ডিং প্রকল্পের মধ্যে একটি। এ প্রকল্পের আওতায় জনগোষ্ঠীকে সম্পৃক্ত করে দরিদ্র মানুষের জন্য স্থায়ী তহবিলের ব্যবস্থা করা এবং ঐ তহবিলকে আয়বর্ধক কাজে নিয়মিতভাবে ব্যবহার করে স্থায়ী আয়ের ব্যবস্থার মাধ্যমে দারিদ্র্য দূর করার লক্ষ্যে একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্প কাজ করে যাচ্ছে।
তিনি আরো বলেন, প্রকল্প মাধ্যমে উপজেলার প্রান্তিক জনগোষ্ঠির উপার্জনের ব্যবস্থা হবে, দরিদ্র মানুষ দারিদ্রতার হাত থেকে রক্ষা পাবে। ভিশন ২০২১ সালে মধ্যে ক্ষুধা ও দারিদ্রমুক্ত মধ্যম আয়ের দেশে ও ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্য নিয়ে আমাদের সকলকে সামনে দিকে চলতে হবে। এছাড়া তিনি এ প্রকল্পের মাধ্যমেই দরিদ্র মানুষের ভাগ্যের চাকা পরিবর্তন করা সম্ভব বলে পরামর্শ প্রদান করেন।

উঠান বৈঠকে আলোচনা শেষে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি প্রকল্পের আওতায় সমিতি’র সদস্যদের মাঝে ঋণ বিতরণ করেন। এসময় গজালিয়া ইউপি মহিলা সদস্য হাইচিংনুং মার্মা, ইউপি সচিব পরিতোষ সহ সমিতি’র সকল সদস্য উপস্থিত ছিলেন।

তথ্যসূত্র: লেখকের ফেসবুক পেজ, সাংবাদিক, লামা, বান্দরবান পার্বত্য জেলা।

Wednesday, June 27, 2018

লামায় তথ্য বিভাগের নারী ও শিশু উন্নয়ন সচেতনতামূলক কর্মসূচী পালিত

বৈশ্বিক অঙ্গনে বাংলাদেশের নারীদের স্বার্থকতা অর্জনের ভুমিকা ছড়িয়ে পড়ছে
লামায় নারী ও শিশু উন্নয়ন সচেতনতামূলক কর্মসূচী পালিত
কার্টেসিঃ মোহাম্মদ কামারুজ্জামা, সাংবাদিক, লামা, বান্দরবান পার্বত্য জেলা।
***************************
লামা জেলা তথ্য অফিসের উদ্যেগে শিশু ও নারী উন্নয়নে সচেতনতামূলক এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি উপজেলা চেয়ারম্যান থোয়াইনু অং চৌধুরী বলেন, শিশুদের মেধা বিকাশের ক্ষেত্র সৃষ্টি করতে হবে। বুদ্ধিদীপ্ত ও কর্মমুখি শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে যোগ্য নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলতে হবে আগামী প্রজম্মকে। সভাপতির বক্তব্যে লামা উপজেলা নির্বাহী অফিসার নূর-এ জান্নাত রুমি ছাত্রছাত্রীদের উদ্দেশ্যে বলেন, মন দিয়ে পড়ালেখা করে প্রত্যেককে সু-নাগরিক হতে হবে। নারী শিক্ষার উপর সরকার অধিক গুরুত্ব দিয়েছে। তিনি বলেন, সরকার ধারাবাহিক নারীবান্ধব কর্মকান্ড অব্যাহত রাখায়, বৈশ্বিক পর্যায়ে বাংলাদেশের নারীরা গৌরবোজ্জল ভুমিকা রাখছেন। দেশের প্রধানমন্ত্রী, স্পীকারসহ প্রশাসন ও রাজনীতিতে নারীর স্বার্থক অগ্রগামী ভুমিকা বিশ্ব ব্যাপি প্রসংশা ছড়িয়ে পড়েছে। সূতরাং বাল্য বিবাহের বিষয়টি চিন্তা না করে নারী শিশুদেরকে আগামী দিনের জন্য যোগ্য নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলতে হবে।
**
বুধবার তথ্য বিভাগের যোগাযোগ কার্যক্রম (৫ম পর্যায়) শীর্ষক প্রকল্পের জিওবি খাতের আওতায় এ কর্মসূচী পালিত হয়। এ উপলক্ষে সকালে উপজেলা পরিষদ চত্বর থেকে এক র‌্যালি বের হয়ে শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে টাউন হল মিলনায়তনে গিয়ে আলোচনা সভায় মিলিত হয়।
**
অনুষ্ঠানে শিশুরদের পানিতে ডুবা প্রতিরোধ, অটিজম ও শিশুর মানসিক স্বাস্থ্য, দুর্যোগকালীন নারী ও শিশুর সচেতনতা, পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা ও শিশু সুরক্ষা সম্পর্কে উপজেলা মৎস্য অফিসার রাশেদ পারভেজ আলোচনা করেন। বর্তমান সরকারের শিক্ষা, জন্ম নিবন্ধন, শিশুর অধিকার, শিশু ও নারী নির্যাতন প্রতিরোধ বিষয়ে মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মো. মোস্তাফিজুর রহমান ভুইয়া, মাদক ও  জঙ্গীবাদ প্রতিরোধ, বাল্য বিবাহ ও যৌতুকমুক্ত সমাজ, ইভটিজিং ও নারীর সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসুচির উপর পুলিশ পরিদর্শক অপ্পেলা রাজু নাহা বক্তব্যদেন। নারী ও শিশু অধিকার, মাদক ও জঙ্গীবাদ প্রতিরোধ যৌতুক ও বাল্য বিবাহ প্রতিরোধ, নিরাপদ মাতৃত্ব ও নারীর ক্ষমতায়ন বিষয়ে মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার।
**
অন্যান্যদের মধ্যে তথ্য অফিসার মো. রুহুল আমিন চৌধুরী শুরুতে স্বাগত বক্তব্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা জোবাইরা বেগম, প্রেসক্লাব সভাপতি প্রিয়দর্শী বড়–য়া বক্তব্য রাখেন। কর্মসুচিতে বিভিন্ন স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসার তিন শতাধিক শিক্ষার্থী অংশ নেয়। শেষে উদ্বুদ্ধকরণে স্থানীয় শিল্পিদের পরিবেশনায় সংগীতানুষ্ঠান ও তথ্য অফিস-কর্তৃক চলচ্চিত্র প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়।

Monday, June 18, 2018

লামা-আলীকদমে নারীর প্রতি সহিংসতা ক্রমেই বৃদ্ধিঃ সাংবাদিক মোহাম্মাদ কামারুজ্জামান এর সমমসাময়িক কলাম

সাংবাদিক মোহাম্মাদ কামারুজ্জামান এর সমমসাময়িক কলামঃ সময় যত আধুনিক আর নারী বান্ধব হচ্ছে, ততই নারী নিগৃহের ঘটনা বাড়ছে সমাজ পরিমন্ডলে, লামা-আলীকদমে নারীর প্রতি সহিংসতা ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে!!!
*****************************************
লামা-আলীকদমে নারীর প্রতি সহিংসতা ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে। । গত তিন বছরে লামা-আলীকদম উপজেলায় বেশ কয়েকটি নারী নির্যাতন ও হত্যাকান্ডের ঘটনাগুলো প্রমান করে; কতটুকু নির্দয় আর নিষ্টুর ও বর্বর আচরণ হচ্ছে নারীর সাথে। ২০১৪ সালে লামা পৌর শহরের প্রাণ কেন্দ্রে পাষন্ড স্বামীর দায়ের কোপে শিক্ষিকা অন্তস্বত্তা স্ত্রী মাক্যচিং মার্মা ঘটনাস্থলে প্রাণ হারায়। খুনী স্বামী জামিনে মুক্ত হয়ে দিব্যি পৃথিবীর আলো বাতাশ নিচ্ছে(!)। এভাবে বিভিন্ন বয়সের অনেক নারী স্বামী-তথাকতিথ প্রেমিক কিংবা পারিবারিক অবজ্ঞা ও নির্যাতনের শিকার হয়ে আত্মহত্যার পথও বেছে নেয়ার নজির রয়েছে। দেশের আইন নারীর অনুকুলে থাকলেও প্রয়োগিক ক্ষেত্রে স্বার্থজালে আটকা পড়ে সংশ্লিষ্টরা। ফলে নির্যাতিত নারীরা সামাজিক বিচার বিড়ম্বনায় ভোগছে। অপরদিকে পুরুষতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থায় নারীরা অসহায় হয়ে দাসত্ব বরণ করে নেয়ারমতো হচ্ছে। সমাজ সভ্যতা শুনতে পায়না নিগৃহের শিকার কণ্যা-যায়া-জননীদের বোবা কান্না। অবস্থা এমনটাই হয়েছে; স্বীয় গৃহেও নিরাপদ নয় নারীরা(!)
**
১৬ জুন গভীর রাতে লামায় এক কলেজ ছাত্রীকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে । লামা উপজেলার ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের ইয়াংছা অংহ্লাড়ী উক্যচিং কারবারী পাড়ায় ক্যাহ্লা অং মার্মার কিশোরী মেয়েকে ঘুমুন্তবস্থায় হত্যা করেছে দূর্ববৃত্তরা। খোজ নিয়ে জানাযায়, রাতে পিতা কণ্যা একই ঘরে পাশাপাশি রুমে ঘুমিয়ে পড়ে। সকাল বেলা মেয়ের বিবস্ত্রব লাশ দেখে বাবা চিৎকার করেন। পিতার সুর চিৎকারে প্রতিবেশিরা এসে বিছানায় মেয়েটির নিস্প্রান দেহ দেখতে পায়। ওই সময় কিশোরীর রুমের জানালাটি ভাঙ্গা ও দরজা খোলাবস্থায় দেখেন পাড়ার লোকজন। জানাযায়, নিহত কিশোরীর মা গত কয়েকদিন ধরে খাগড়াছড়িতে চিকিৎসার জন্য অবস্থান করছেন। শনিবার রাতে তাদের ঘরে পাশাপাশি দু’রুমে পিতা-মেয়ে ঘুমিয়ে ছিলেন।  কিশোরীটি এ বছর ‘মাতামুহুরী ডিগ্রি কলেজ থেকে এইসএসসি পরীক্ষা দিয়েছে। আর দু’মাস পরে পরীক্ষার রেজাল্ট দিবে। প্রাথমিকভাবে ধর্ষনের কোন আলামত বা শরীরে কোথাও কোন আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি বলে পুলিশ জানায়।
**
রবিবার ছিল বিশ্ব বাবা দিবস, কিন্তু হতভাগ্য বাবা ক্যাহ্লা অং মার্মা বিশ্ব বাবা দিবসের প্রথম সকালে দেখলো নিজ সন্তানের বিবস্ত্র লাশ (!)। নির্দয় ও পৈচাশিকভাবে ১৯ বছর বয়সের কলেজ পড়–য়া কিশোরীকে  হত্যার ঘটনা, যে কোন বিবেককে কাঁদিয়ে তুলবে। হত্যাকারীরা নিহতের শরীর থেকে স্বর্ণালংকার, ব্যাক্তিগত ব্যবহারের মোবাইল ফোন ও সাথে থাকা নগদ টাকা নিয়ে যায়।
**
সমাজে এমন অনেক নারী রয়েছে, যাঁরা নির্যাতন হতে হতে মরে বেচেঁ আছে। প্রশাসনের দীর্ঘ সূত্রিতাকে এ ক্ষেত্রে দায়ি করছেন লোকজন। অনেক সময় পবিত্র সম্পর্কের দোহাই দিয়ে স্বামী নামের পাষন্ড পুরুষ মানুষটিকে নারীর প্রতি আরো হীংস্র হওয়ার সুযোগ করে দেয় প্রচলিত সামাজিক নিয়ম। বলা হয় স্বামী স্ত্রীর দ্বন্ধ, কিছুদিন পর ঠিক হয়ে যাবে। আসলে কি ঠিক হয়ে যাবে কিনা? নারী নির্যাতনের সামাজিক সূচক বিবেচনায় কতটা যুক্তি মিলে এই কথায়। এমন প্রশ্ন জাগাটা উচিৎ। নাকি কিছুদিন পরে সম্পর্কের জোড়া-তালির নামে নারীর প্রতি আত্মঘাতি হামলা বা সামাজিকভাবে হেয়পতিপন্ন করার পরিকল্পনা চলছে; স্থান-কাল পাত্র ভেদে সেই দিকগলোও ভাবা উচিৎ। এ রিপোর্টের উজ্জল দৃষ্টান্ত হচ্ছে আলীকদম উপজেলার এক স্বনামধন্য আন্তর্জাতিক খ্যাতি অর্জনকারী শিক্ষিকা জয়নব আরা বেগম ও তার ষোড়শী কণ্যা।
**
জানা গেছে, এই শিক্ষিকা তার দেবর আলীকদম উপজেলার থোয়াইচিং হেডম্যান পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মনিরুল ইসলাম ও স্বামী চৈক্ষ্যং ত্রিপুরা পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক শফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে গত ১৫ ফেব্রুয়ারি আলীকদম থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা রুজু করে। এ ঘটনার তদন্ত শেষে অভিযুক্ত শিক্ষকদ্বয়কে বান্দরবান জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা গত ১০ এপ্রিল ১৪৭ নম্বর স্মারকের অফিস আদেশে সাময়িক বরখাস্ত করেন । গত ২৫ মে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ (সংশোধিত ২০০৩) ১১(গ)/৩০ ধারায় চার্জশীট দাখিল করেছেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও আলীকদম থানার ওসি রফিক উল্লাহ্। এছাড়াও শিক্ষিকার অভিযুক্ত স্বামী শফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে চকরিয়া কোর্টে সি.আর মামলা নং- ১৩০/২০১৮ রুজু হয়। এ মামলার সাক্ষী হচ্ছেন চকরিয়া উপজেলার দক্ষিণ কাকারা গ্রামের বাসিন্দা রেজাউল করিম।
**
শিক্ষিকা জয়নব আরার অভিযোগে প্রকাশ, মামলা দায়েরের পর অভিযুক্ত শিক্ষক শফিকুল মামলার বাদী জয়নব আরা বেগম ও সাক্ষীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মনগড়া কুৎসা রটিয়ে বান্দরবান চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে সি.আর মামলা নং- ৩৯/২০১৮ দায়ের করেন। আদালতের নির্দেশে এ মামলার তদন্ত করেন, আলীকদম উপজেলা শিক্ষা অফিসার ইস্কান্দর নুরী। তদন্ত কর্মকর্তা গত ১৯ এপ্রিল ১৩৯ নম্বর স্মারকে ‘সাক্ষ্য-প্রমাণে কথিত ঘটনার সত্যতা পাওয়া যায়নি’ মর্মে আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন।
**
মামলার বাদী নির্যাতিত জয়নব আরা বেগম বলেন, শিক্ষক শফিকুল এবং তার দুই সহোদর মনিরুল ও জহিরুলের বিরুদ্ধে পুলিশের চার্জশীট, তদন্তকারী কর্মকর্তা কর্তৃক শফিকুলের দায়ের করা মামলা মিথ্যা মর্মে তদন্ত প্রতিবেদন দেওয়ার পর থেকে তারা তিন সহোদর মারমুখী হয়ে পড়ে। শুরু করেন উন্মাদের মতো আচরণ। এরপর থেকে শফিকুল তার ফেসবুক আইডিতে অশ্লীল ও মানহানিকর ছবি এবং লিফলেট আপলোড করে চলেছে। এছাড়াও শফিকুল ও মনিরুল মিলে চকরিয়ার কাকারা গ্রামে এবং আলীকদম উপজেলার বাস স্টেশন, পানবাজার, চৌমুহুনী ও আলীকদম বাজার এলাকার বিভিন্ন ওয়ালে শিক্ষিকা জয়নব ও স্থানীয় রিপোর্টার ও মানবাধিকার কর্মি, মামলার তদন্ত সংশ্লিষ্টদের জড়িয়ে  চরিত্রহনন করে পোস্টারিং ও লিফলেট বিতরণ করে যাচ্ছে। এ ব্যাপারে শিক্ষিকা জয়নব আরা বেগম আইসিটি এ্যাক্ট-এ মামলা করতে গিয়েও পারেননি। জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, পুলিশ সুপার থেকে শুরু করে এই ন্যাক্কার জনক ও ভয়ঙ্কর ষড়যন্ত্র মূলক ঘটনার কথা সর্ব মহল জ্ঞাত রয়েছেন। এদিকে আইনের ফাকগলে শফিকুল ইসলাম ও তার সহোদররা চরমভাবে মারমুখি হয়ে উঠে জয়নব ও তাকে মানবিক সহায়তাকারীসহ তার আত্মীয়-স্বজনের উপর।
**
জানাযায়, গত ১৫ জুন চকরিয়া উপজেলা মাঝেরফাড়ি বাজারে মামলার সাক্ষী রেজাউল করিমকে অতর্কিত আক্রমণ করে মামলার ১নম্বর আসামী শফিকুল ইসলামের নেতৃত্বে অভিযুক্ত তিন সহোদর। এ সময় ছুরি দিয়ে রেজাউল করিমে মারাত্মক জখম করে শফিকুল ইসলাম। তার অপর দুইভাই মনিরুল ও জহিরুলও ছুরি ও ইটের আঘাতে উপর্যুপরি জখম করেন রেজাউলকে। ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে আসামীদের খুন-জখমের কবল থেকে রেজাউলকে উদ্ধার করেন ওই এলাকার ওয়ার্ড মেম্বার বাদশা মিয়াসহ স্থানীয়রা। ছুরি ও ইটের আঘাতে রেজাউলের ডান চোখ দৃষ্টি হারাতে চলেছেন বলে আশংকা করছেন ডাক্তার ও আহতের পরিবার-পরিজন। এ ঘটনার সময় রেজাউল করিম থেকে অভিযুক্ত শফিক, জহিরুল ও মনির জোর করে ৮৫ হাজার টাকা ও একটি এন্ড্রয়েড মোবাইল ছিনিয়ে নেয় বলে থানায় করা এজাহারে বলা হয়েছে। অভিযুক্ত তিনজনের মধ্যে দুইজনই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বরখাস্ত হওয়া শিক্ষক। দুই সহোদর শিক্ষকের নেতৃত্বে প্রকাশ্যে-বাজারে মামলার ঘটনাটি প্রকাশ্য সন্ত্রাসী বলে আখ্যা দিয়েছেন স্থানীয়রা
**
ঘটনার হোতা অভিযুক্ত শিক্ষক শফিকুল ইসলাম, ঘটনার দায় অস্বীকার করলেও ফেসবুকে ছবি ও লিফলেট আপলোডের কথা স্বীকার করেন। তিনি বলেন, অন্যায়ভাবে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আমাকে চাকুরী থেকে সাময়িক সাসপেন্ড আদেশ দিয়েছেন। আমি বর্তমানে ৫/৬ মামলার আসামী। তাই আমার মাথা ঠিক নেই(!)।
**
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী কাকারা ইউনিয়ন পরিষদের ৭নং ওয়ার্ডের মেম্বার বাদশা মিয়া বলেন, ‘ঘটনাস্থলে আমি শফিকসহ তিন ভাইকে এই সন্ত্রাসী হামলায় অংশ নিতে দেখেছি। এ ঘটনায় আহত রেজাউল কক্সবাজার সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছে। কাকারা গ্রামের লোকজন জানান, শফিকসহ তারা তিন ভাইয়ে গত কয়েক বছর আগে স্থানীয় এক যুবককে লাঠিদ্বারা প্রকাশ্যে বেদম প্রহার করে, তা ভিডিও ধারণ করে মোবাইলে আপলোড করা হয়। ওই নিষ্টুর হামলার কোন বিচার না হওয়ায় তারা আরো হীংস্র হয়ে উঠে। অবশেষে তাদের হীং¯্র আছড় লাগতে শুরু করেছে, শিক্ষিকা জয়নব আরাসহ তাদের সন্তান, আত্মীয় স্বজনসহ ঘোটা সমাজ পরিমন্ডলে। এদিকে শিক্ষিকা জয়নব আরা বেগম জানান, শফিকুল ইসলামের লেলিয়ে দেয়া সন্ত্রাসীরা প্রায়ই গভীর রাতে তার ঘরের দরজায় গিয়ে নানান ধরণের ভয়ভীতি প্রদর্শন করে। সে এবং তার দশম শ্রেণিতে পড়–য়া মেয়েকে নিয়ে নানান মন্তব্য ছড়াচ্ছে সমাজে। এসব অপবাদের যন্ত্রণায় তারা মা মেয়ে এখন মরে বেচেঁ আছেন। শফিকুলদের বেপরোয়া, সন্ত্রাসী, মারণাত্মক আচরণ থেকে প্রাণে বাঁচতে শিক্ষিকা জয়নব আরা বেগম সংশ্লিষ্ট আইন প্রয়োগকারী মহলসহ মানবাধিকার সংগঠনগুলোর আরো সজাগ ও সচেতন দৃষ্টি কামণা করেছেন।
**
এই বাস্তবতায় বিষয়টি খুবই উদ্বেগের। আইন প্রয়োগকারী দায়িত্বশীলরা ঢিলেঢালা ভাব বা নিরব ভুমিকা পালন করা মোটেও কাম্য নয়। ঘাতকদের মগজের কোণে স্থান নেয়া অপরাধ জিবানুটি দ্রুত ধংস করা না হলে, এর প্রভাব সমগ্র সমাজ শরীরে ছড়িয়ে পড়বে। তখন হয়তো এর নিষ্ঠুর খেসারত শুধু নিরিহ নারী বা সমাজের লোকদেরকেই দিতে হবে। সূতরাং সম্পর্কের দোহাই দিয়ে ঘাতক চক্রকে সুযোগ করে দেয়ার কোন মানে হয়না। বিষয়টি আইন প্রয়োগকারী সংস্থা নজরে আনা প্রয়োজন রয়েছে বলে স্থানীয়দের দাবী।
*****************************************
লেখকঃ সাংবাদিক, লামা, বান্দরবান পার্বত্য জেলা।